ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১)
, ০১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ফতওয়া বিভাগ
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ
অর্থ: আমি বনী আদম তথা মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি।
কিন্তু কথা হলো- শুধু মানুষ বা ‘আশরাফুল মাখলূকাত’ হিসাবে সৃষ্টি হওয়াই কি কামিয়াবী বা সফলতা? কখনো নয়। কারণ, যদি তাই হতো তবে আবূ জাহিল, আবূ লাহাব জাহান্নামী হতো না, কেননা তারাও মানুষ ছিল।
মূলতঃ মানব জাতির ‘আশরাফিয়াত’ তখনই বজায় থাকবে, যখন তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম-আহকামের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্যতা প্রকাশ করবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তবে সে হবে মাখলূকাতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর তাই এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি মানব জাতিকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের অতল তলে পৌঁছিয়ে দিব, একমাত্র তাদেরকে ব্যতীত, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে। (পবিত্র সূরা ত্বীন শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানব জাতির মধ্যে যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ভিত্তিক আক্বীদাহ পোষণ করবে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ মুতাবিক আমল করবে, একমাত্র তারাই আশরাফিয়াত বা শ্রেষ্ঠত্ব তথা পূর্ণ সফলতা লাভ করতে পারবে। এছাড়া শুধুমাত্র আক্বল-বুদ্ধি, ধন-দৌলত, বংশ মর্যাদা দ্বারা কখনোই কামিয়াবী বা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা সম্ভব নয়। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হতে সৃষ্টি করেছি এবং একজন আরেক জনের পরিচয় লাভের জন্যে বিভিন্ন গোত্রে ও বংশে বিভক্ত করেছি। (তবে) নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক মুত্তাক্বী বা পরহেযগার। (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মক্কা শরীফ কাফিরদের কবল হতে মুক্ত করলেন, তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কা’বা শরীফ উনার মধ্যে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। দ্বীন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে আযান দিলে কেউ কেউ বলতে লাগলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর কোন লোক পেলেন না? তিনি একজন হাবশী, কৃতদাস হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আযান দিতে বললেন? উনার চেয়েও তো সুন্দর আকৃতির, উত্তম বংশীয় লোক ছিল। ঠিক তখনই মহান আল্লাহ পাক তিনি উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উত্তম আকৃতি, উত্তম বংশ ইত্যাদির কোনই মূল্য নেই, যদি তার মধ্যে তাক্বওয়া বা পরহেযগারী না থাকে।
অতএব, উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও শানে নুযূলের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যদি কেউ কামিয়াবী তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই তাক্বওয়া অর্জন করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ‘তাক্বওয়া’ কি? মুত্তাক্বী কাকে বলে এবং কি করে মুত্তাক্বী হওয়া যাবে?
মূলতঃ হাক্বীক্বী তাক্বওয়া হলো- সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়া। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করা। আর যে ব্যক্তি তা করবে, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা পরহেযগার। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)