ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪)
, ২২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ফতওয়া বিভাগ
হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা না করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন ইবলিসের গলায় লা’নতের তবকা পরিয়ে জান্নাত থেকে বের করে দেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে ইবলিস যে অঙ্গীকার করেছিল, তা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ وَمَنْ يَّتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِيْنًا
অর্থ: (ইবলিস শয়তানের অঙ্গীকার) আর আমি তাদের (বান্দাদের) মহান মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিকৃত আকৃতি পরিবর্তন বা বিকৃত করার আদেশ করবো। (মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন এ ব্যাপারে) যারা মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, তারা প্রকাশ্য ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে-
اور بھی تعلیم دونگا جس سے وہ اللہ تعالی کی بنائی ھر ئی صورت کو بیگارــ اور یہ اعمال ناسقی سے ھے جیسے دارھی مند انا ........... (تفسیر بیان القران)
অর্থ: (ইবলিস বলেছিল) আমি আরো শিক্ষা দিবো, যার কারণে তারা (মানুষেরা) মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিকৃত আকৃতি পরিবর্তন করবে। মূলতঃ এটা ফাসিকী কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- দাড়ি মু-ন করা .........” (তাফসীরে বয়ানুল কুরআন ২য় খ- পৃষ্ঠা-১৫৭)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি ও গোঁফ চেঁছে ফেলা বা মু-ন করা মূলতঃ ইবলিস শয়তানের আদেশ পালন করারই নামান্তর। উপরন্তু আকৃতি বিকৃতি বা পরিবর্তন হওয়ার কারণ, অর্থাৎ পুরুষের দাড়ি ও গোঁফ চেঁছে ফেলার কারণে মেয়ে লোকের সাদৃশ্য হয়ে যায়।
আকৃতি বিকৃত করার পরিণাম:
পুরুষের জন্যে মেয়ে লোকের আকৃতি ও মেয়ে লোকের জন্যে পুরুষের আকৃতি ধারণ করা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ সকল পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত (লা’নত) করেছেন, যারা মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করে। অনুরূপ যে সকল মেয়ে লোক পুরুষের আকৃতি ধারণ করে, তাদের প্রতিও অভিসম্পাত বা লা’নত করেছেন। (বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্যে তার “দাড়ি ও গোঁফ” চেঁছে ফেলা ইবলিস শয়তানকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা ও মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করার নামান্তর, যা শরীয়তে সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। উহা অমান্য করা মহান আল্লাহ পাক উনার গযব বা লা’নত প্রাপ্তির কারণ।
হযরত লূত্ব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে ধ্বংস করার কারণ:
আর তাই দেখা যায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ববর্তী অনেক ক্বওম বা গোত্রকে এ ধরনের অনেক অপকর্মের বা নাফরমানীর কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যেমন- ক্বওমে লূত্ব, ক্বওমে আদ, ক্বওমে ছামূদ ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ تَعْمَلُ الْخَبَائِثَ
অর্থ: আমি হযরত লূত্ব আলাইহিস সালাম উনাকে নাযাত দিয়েছি, আর উনার ক্বওম বা গোত্র যারা অপকর্মে লিপ্ত ছিল, উক্ত অপকর্মের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৪)
হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরের কিতাবসমূহে উল্লেখ করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرُ خِصَالٍ عَمِلَتْهَا قَوْمُ لُوْطٍ بِهَا هُلِكُوْا ....... وَقَصُّ اللِّحْيَةِ وَطُوْلُ الشَّارِبِ- الخ (تفسير روح المعانى)
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে দশটি অপকর্ম বা নাফরমানীর কারণে হযরত লূত্ব আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমকে ধ্বংস করা হয়েছিল, তার মধ্যে ... দাড়ি কাটা ও গোঁফ লম্বা করা, এ নাফরমানীও ছিল। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্য দাড়ি ও গোঁফ চেঁছে ফেলা, আকৃতি বিকৃত হয়ে মেয়ে লোকের সাদৃশ্য হওয়ার কারণ। আর শয়তানের আদেশ মান্য ও মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অমান্য হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার গযব বা লা’নত প্রাপ্তির কারণ। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি চেঁছে ফেলা ও গোঁফ অধিক লম্বা করা নাজায়িয ও বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য হওয়ার কারণ। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)