নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না
৩রা মুহররম, ১৪৪২ হিজরী (ইয়াওমুল আহাদ)
, ২০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
عَنْ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ يَوْمًا فَـقَالَ فِيْ خُطْبَتِهٖ أَلَا إِنَّ الدُّنْـيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْـهَا الْبَـرُّ وَالْفَاجِرُ أَلَا وَإِنَّ الْاٰخِرَةَ أَجَلٌ صَادِقٌ يَـقْضِيْ فِيْـهَا مَلِكٌ قَادِرٌ أَلَا وَإِنَّ الْـخَيْـرَ كُلَّهٗ بـِحَذَافِيْرِهٖ فِـي الْـجَنَّةِ أَلَا وَإِنَّ الشَّرَّ كُلَّهٗ بـِحَذَافِيْرِهٖ فِي النَّارِ أَلَا فَاعْمَلُوْا وَأَنْـتُمْ مِنَ اللّٰهِ عَلٰى حَذَرٍ وَاعْلَمُوْا أَنَّكُمْ مُعْرَضُوْنَ عَلٰى أَعْمَالِكُمْ فَمَنْ يَّـعْمَلْ مِثْـقَالَ ذَرَّةٍ خَيْـرًا يَّـرَهٗ وَمَنْ يَّـعْمَلْ مِثْـقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّـرَهٗ. (مسند شافعی)
হযরত আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন খুতবা মুবারক প্রদানকালে বলেন, সাবধান! নিশ্চয়ই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আবাসস্থল। এখান থেকে নেককার এবং বদকার সকলেই আহার বা ভোগ করে। সাবধান! নিশ্চয়ই পরকাল একটি নির্দিষ্ট সময় এবং সেখানে বিচার করবেন যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, মালিক। নিশ্চয়ই সর্বপ্রকার কল্যাণের সম্পূর্ণটাই জান্নাতে রয়েছে। সাবধান! নিশ্চয়ই সর্বপ্রকার মন্দের সম্পূর্ণটাই জাহান্নামে রয়েছে। তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে (নেক) আমল কর। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে তোমাদের আমলসহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উপস্থিত করা হবে। যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ নেক কাজ করবে সে তা (পরকালে) দেখতে পাবে। যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ বদ কাজ করবে সে তা (পরকালে) দেখতে পাবে।
[মুসনাদে শাফেয়ী]
সুতরাং বান্দা-বান্দীরা পরকালে নেক আমলের দ্বারাই ফায়দা লাভ করতে পারবে। কেননা সেখানে বিচার করবেন যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মালিক, মহান আল্লাহ পাক তিনি। বান্দার কোনো আমলই উনার অজানা নয়। তাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকে নেক আমলে মশগুল থাকা উচিত।
অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ قَسَّمَ بَـيْـنَكُمْ أَخْلَاقَكُمْ كَمَا قَسَّمَ بَـيْـنَكُمْ أَرْزَاقَكُمْ وَإنَّ اللهَ تَـعَالٰى يُـعْطِي الدُّنْـيَا مَنْ يُـحِبُّ وَمَنْ لَا يُـحِبُّ وَلَا يُـعْطِي الدِّيْنَ إلَّا مَنْ اَحَبَّ فَمَنْ أَعْطَاهُ اللهُ الدِّيْنَ فَـقَدْ أَحَبَّهٗ وَالَّذِيْ نَـفْسِيْ بِيَدِهٖ لَا يُسْلِمُ عَبْدٌ حَتّٰى يُسْلِمَ قَـلْبُهٗ وَلِسَاُنهٗ وَلَا يُـؤْمِنُ حَتّٰى يَأْمَنَ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ. (رواهـما احـمد و البيهقى فى شعب الايـمان)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মাঝে চরিত্রকে বন্টন করেছেন যেমন তোমাদের মাঝে রিযিক বন্টন করেছেন (অর্থাৎ রিযিক সবার মাঝেই বন্টন করা হয়)। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে পছন্দ করেন এবং যাকে পছন্দ করেন না উভয়কেই দুনিয়া দান করেন। আর তিনি যাকে মুহাব্বত করেন তাকে ব্যতীত কাউকে দ্বীন দান করেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে দ্বীন দান করেন তাকে অবশ্যই তিনি মুহাব্বত করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! কোনো বান্দা মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তর ও জবান মুসলমান না হবে। তার প্রতিবেশি তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত (হাক্বীক্বী) ঈমানদার হতে পারবে না।
[আহমাদ ও বায়হাক্বী শরীফ]
অর্থাৎ নেককার-বদকার উভয়কেই মহান আল্লাহ পাক দুনিয়া দান করেন। তবে যাকে পছন্দ করেন তাকেই কেবল দ্বীন দান করেন। আর যাকে দ্বীন দান করেন তার পক্ষেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে, নেক কাজে মশগুল থেকে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া অথবা অন্তর-জবানে মুসলমান হওয়া সম্ভব।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ ارْتَـحَلَتِ الدُّنْـيَا مُدْبِرَةً وَارْتَـحَلَتِ الاٰخِرَةُ مُقْبِلَةً وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْـهُمَا بَـنُـوْنَ فَكُوْنُـوْا مِنْ أَبْـنَاءِ الاٰخِرَةِ وَلاَ تَكُوْنُـوْا مِنْ أَبْـنَاءِ الدُّنْـيَا فَإِنَّ الْيَـوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ. (رواه البخاري)
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুনিয়া পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে আর পরকাল যাত্রা করে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছে। উভয়েরই সন্তান রয়েছে। তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা এখন আমলের সময়, হিসাবের সময় নয়। আর আগামীকাল অর্থাৎ পরকাল হিসাবের জায়গা, আমলের জায়গা নয়।
[বুখারী শরীফ]
অর্থাৎ প্রতিদিনই মানুষের হায়াত থেকে একটা করে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই দুনিয়াতে কোনো আমলের হিসাব না করে, হারাম-নাজায়েয কাজ পরিহার করে শুধু নেক আমল করে যেতে হবে। যারা নেক আমল করবে তাদের জন্যই কল্যাণ। এজন্য মহান আল্লাহ পাক বলেন,
فَمَنْ كَانَ يَـرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهٖ فَـلْيَـعْمَلْ عَمَلًا صَالِـحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖ أَحَدًا ﴿১১০﴾ سورة الکهف
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত লাভের আশা করে সে যেন আমলে ছলেহ তথা নেক আমল করে এবং তার রব উনার ইবাদতের সাথে কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহাফ শরীফ: ১১০]
ইবাদত বলতে বুঝায়, মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করা অর্থাৎ আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলা। এক্ষেত্রে অন্য কাউকে উনার সাথে শরীক না করা।
যেহেতু আমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত লাভ করতে হবে তাই মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কাউকে শরীক না করে নেক আমল করতে হবে অর্থাৎ উনার আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সেই তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)