তিন ফিলিস্তিনিকে নগ্ন করে মারধর, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা
, ০৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) বিদেশের খবর
ফিলিস্তিনের দখল করা পশ্চিম তীরের একটি গ্রাম ওয়াদি আস-সাইক। ইসরায়েলের সেনা ও পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী একদল ইসরায়েলি অস্ত্রের মুখে ১২ অক্টোবর গ্রামটি থেকে হাত-পা বেঁধে তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে দিনভর তাদের ওপরে চলে অকথ্য নির্যাতন।
সেদিন ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে তাদের ওপর কী নির্মম নির্যাতন হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়েছেন সেই তিন ফিলিস্তিনি। ভয়াবহ সে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তারা বলেছে, হাত বাঁধার পর থেকেই বেধড়ক মারধর করা হতে থাকে তাদের। খুলে নেওয়া হয় তাদের পরনের জামাকাপড়। নগ্ন করার পর তোলা হয় ছবি। তাদের মধ্যে দুজনের শরীরে প্রগ্রাবও করে দেওয়া হয়। সিগারেটের আগুনে দেওয়া হয় ছ্যাঁকা। একজনের পায়ুপথে লাঠি ঢোকানোর চেষ্টাও চলে।
একই দিন ইসরায়েলের সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা তিন বামপন্থী ইসরায়েলি অধিকারকর্মীকেও আটক করে। আটক ইসরায়েলিদের তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিন ফিলিস্তিনির ওপর সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চলে। পরে সন্ধ্যায় ছেড়ে দিয়ে পাঠানো হয় রামাল্লার এক হাসপাতালে।
নির্যাতনের শিকার সেই ফিলিস্তিনিরা বলেছে, তাদের বলা হয় যে শিন বেতের (ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) সদস্যরা তাদের আটক করেছে। কিছুক্ষণ পর বেসামরিক গাড়িতে কয়েকজন (তারা ধারণা করেছিল শিন বেতের সদস্য) আসে। তারা এলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হয়।
সেদিনের এই ঘটনার শিকার তিন ফিলিস্তিনি এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিন ইসরায়েলি অধিকারকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। তিন ফিলিস্তিনির মধ্যে যে দুজন সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তারা কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়, পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আঘাতে আঘাতে কালশিটে দাগ পড়েছে শরীরে। কোথাও রয়েছে পোড়ানোর ক্ষত।
ইরাকে আবু গারিব কারাগারের কথা শুনেছেন? শুনেছি, সেখানেও ঠিক এভাবে নির্যাতন করা হয়। এটা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আবু গারিব।
নির্যাতনের শিকার তিন ফিলিস্তিনির একজন আবু হাসান। তিনি বলেছেন, ‘ইরাকে আবু গারিব কারাগারের কথা শুনেছেন? শুনেছি, সেখানেও ঠিক এভাবে নির্যাতন করা হয়।’ তার শরীর এখনো ব্যথায় জর্জরিত জানিয়ে আবু হাসান বলেছে, ‘এটা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আবু গারিব।’
আবু হাসান বলেছে, ‘আমরা গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমরা একটি পিকআপ ট্রাক দেখতে পাই। সেই গাড়িতে ছিল সেনাবাহিনীর উর্দি পরা একদল বসতি স্থাপনকারী। প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র। কেউ কেউ ছিলেন মুখোশ পরা। আমাদের সামনে এসে গাড়িটি থামল। অস্ত্র হাতে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামল ২০ থেকে ২৫ জন। নেমেই তারা সোজা আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়াল।’
গাড়িতে করে গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের যেভাবে নির্যাতন করা হয়, তার বিবরণ উঠে এল দুই ফিলিস্তিনির কথায়। তারা জানালেন, গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর উর্দি পরা বসতি স্থাপনকারীরা তাদের মেঝেতে ফেলে অস্ত্র দিয়ে মারধর শুরু করে। মাথা মেঝেতে ঠেসে ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। এরপর দড়ি দিয়ে তাদের হাতগুলো বেঁধে ফেলা হয়।
আবু হাসান বলেছে, ‘আমাদের মুখ মেঝেতে ঠেলে ধরে রাখা হয়। পরে তাদের একজন একটি ছুরি দিয়ে আমাদের পরনে থাকা পোশাক কেটে দেয়। এরপর অন্তর্বাস ছাড়া আমাদের শরীরে কিছু ছিল না।’ এ সময় নির্যাতনকারীরা মোট কতজন ছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও হাসান বললেন, ‘৮ থেকে ১০ জন হবে।’
নির্যাতনের শিকার অপর ফিলিস্তিনি খালেদ বলেছে, ‘আমাদের বেধড়ক পিটুনি চলতেই থাকে। লোহার পাইপ দিয়ে হাত, বুক এমনকি মাথায় পর্যন্ত বারবার আঘাত করা হয়। শরীরের প্রতিটি জায়গায় পেটায়। সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেয়। আমার হাতের নখ তুলে নেওয়ারও চেষ্টা করে।’
গালাগালি চলতে থাকে জানিয়ে আবু হাসান বলেছে, ‘তারা আমাদের মাথায় আঘাত করে আর মুখে ছুড়ে মারতে থাকে গোবর ও ময়লা–আবর্জনা।’ এর মধ্যে একজন চোখে বাঁধা কাপড় খুলে দেয়। আবু হাসান বলেছে, ‘এরপর আমার মুখের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে, “আমাকে চিনতে পারছ না?” আমি উত্তর দিই, না। এটা শোনার পর আমার পুরো শরীরে আঘাত করতে থাকে। মাথা ও দুই পায়ে পেটায়। আমার মেরুদ- ভেঙে দেওয়ার জন্য পেছন থেকে পিঠেও লাথি মারে।’
নির্যাতনের শিকার ওই দুই ফিলিস্তিনি জানান, এভাবে দিনভর নির্যাতনের পর ভবন থেকে বের করে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। তখনো তাদের হাত ছিল বাঁধা। পরনেও ছিল শুধু অন্তর্বাস। এ সময় তাদের ছবি তোলা হয়। পরে সেসব ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব ছবিতে তৃতীয় যে ফিলিস্তিনিকে দেখা যায়, তার নাম মাজিদ (৩০)। মাজিদ ওয়াদি আস–সাইক নামের ওই গ্রামের বাসিন্দা। মাজিদ জানান, সেদিন সকাল ১০টার দিকে তার গ্রামে ঢোকে ইসরায়েলের সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা।
মাজিদ বলেছে, ‘আমি তখন বাড়িতে। তারা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসে। বিভিন্ন বাড়িতে ঢোকে লোকজনকে তুলে নেওয়ার জন্য। তবে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পালালেও আমি তাদের হাতে আটক হয়ে যাই। আমাকে ধরার পর রাইফেল ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। দড়ি দিয়ে হাত বাঁধে। তখন প্রচ- গরম। আমার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল। বারবার চেতনা হারাচ্ছিলাম।’
দিনভর নির্যাতনের পরে সেদিন সন্ধ্যায় আবু হাসান, মোহাম্মদ খালেদ ও মাজিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় তাদের হাঁটা-চলার মতো অবস্থাও ছিল না। এ জন্য ফিলিস্তিনের একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাদের রামাল্লার একটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা।
সেদিন সারা রাত হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফেরেন আবু হাসান। তবে খালেদকে হাসপাতালে থাকতে হয় আড়াই দিনের বেশি। আর মাজিদ হাসপাতালে ছিলেন দুই দিন। আবু হাসান বলেছে, ‘আমার সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরেছিল সেদিন। আমি এখনো একা ঠিকমতো দাঁড়াতে পারি না।’
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘প্রত্যেক ইসরায়েলি হয়তো সন্ত্রাসী নয়তো সন্ত্রাসীর সন্তান’
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইমরান খানের ৬০ সমর্থককে কারাদণ্ড দিলো পাকিস্তানের সামরিক আদালত
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আফ্রিকার ১৮টি দেশে আমেরিকার তৎপরতাকে সন্দেহজনক বলছে রাশিয়া
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আফ্রিকার ১৮টি দেশে আমেরিকার তৎপরতাকে সন্দেহজনক বলছে রাশিয়া
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাগর পথে স্পেনে যাওয়ার চেষ্টায় এক বছরে ১০ হাজারের বেশি নিখোঁজ
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটিও জ্বালিয়ে দিয়েছে দখলদার সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনী
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ, পাকিস্তানের ১৯ সেনা নিহত
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘আমেরিকার ৪র্থ যুদ্ধজাহাজও আমাদের সহজ লক্ষ্যবস্তু’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১ দল দখলদারদের উপর একাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন বীর যোদ্ধা
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কুর্দি যোদ্ধারা অস্ত্র সমর্পণ না করলে মাটিচাপা দেয়া হবে -এরদোগান
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দখলদার সন্ত্রাসী ইসরায়েলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র অনুমোদন করছে জার্মান সরকার
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আমেরিকার অহংকার-খ্যাত এফ-১৮ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করলো ইয়েমেন
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)