তলাক্ব এবং তৎসংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল (৪)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
, ০২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
তলাক্ব কাকে বলে?
الطلاق শব্দের অর্থ- বন্ধনমুক্ত হওয়া, ছিন্ন করা। শরীয়তের পরিভাষায়, নির্ধারিত শব্দের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করাকে তলাক্ব বলা হয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে ঘৃণ্যতম হালাল কাজ হলো তলাক্ব। (আবূ দাউদ শরীফ)
অপর বর্ণনায় রয়েছে-
مَا خَلَقَ اللَّهُ شَيْئًا عَلَى وَجْهِ الأَرْضِ أَبْغَضَ إِلَيْهِ مِنَ الطَّلاَقِ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি তলাক্ব অপেক্ষা নিকৃষ্টতম কোন কিছু দুনিয়াতে সৃষ্টি করেননি। (দারু কুতনী শরীফ)
মোট কথা হলো, তলাক্ব একটি নিষিদ্ধ ও ঘৃণ্য কাজ। একান্ত প্রয়োজনের তাগীদে তা মুবাহ করা হয়েছে।
একান্ত প্রয়োজন কিংবা নিরূপায় হওয়া ব্যতিত যদি কেউ তলাক্ব চায় বা তলাক্ব দেয়, তাহলে সে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রোষানলে ও অসন্তুষ্টির মধ্যে পড়ে যায়। গযবের মধ্যে পড়ে যায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا فِى غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ
অর্থ: হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে নারী নিরূপায় হওয়া ব্যতিত আপন আহাল বা স্বামীর নিকট তলাক্ব চাবে সে নারী জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। নাঊযুবিল্লাহ! (অথচ পাঁচশত বছরের দূরের স্থান থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে)। (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারেমী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ أُخْبِرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ رَجُلٍ طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاَثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا فَقَامَ غَضْبَانًا ثُمَّ قَالَ أَيُلْعَبُ بِكِتَابِ اللهِ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত মাহমুদ ইবনে লাবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আরজ করা হলো- যে তার আহলিয়াকে একসাথে তিন তলাক্ব দিয়েছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্টির সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর বললেন, আমি আপনাদের মাঝে থাকতেই কি মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে খেলা আরম্ভ হলো। নাঊযুবিল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ)
তলাক্বের প্রকারভেদ:
শব্দগতভাবে বা শব্দের দিক দিয়ে তলাক্ব দুই প্রকার-
১. তলাক্বে ছরীহ্ বা সুস্পষ্ট তলাক্ব ২. তলাক্বে কিনায়া বা ইঙ্গিত সূচক তলাক্ব।
১. الطلاقশব্দের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করাকে তলাক্বে ছরীহ্ বা সুস্পষ্ট তলাক্ব বলে।
তলাক্ব শব্দ উল্লেখ করলে তলাক্বের নিয়ত করুক বা না করুক, হেসে হেসে বলুক, আর রাগান্বিত অবস্থায় বলুক। তলাক্ব কার্যকর করার জন্য বলুক আর রসিকতা করে বলুক- সর্বাবস্থায় তলাক্ব কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে তলাক্বের নিয়ত না করলেও এক তলাক্বে রেজয়ী পতিত হবে। আর যদি সংখ্যা উল্লেখ করে তাহলে যত সংখ্যা উল্লেখ করবে তত তলাক্বই কার্যকর হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনটি বিষয় এমন রয়েছে তা প্রকৃত অর্থে হোক কিংবা হাসি-ঠাট্টায় হোক অথবা গোস্সায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকর হয়। ১. বিবাহ ২. তলাক্ব ৩. রাজায়াত বা ফিরিয়ে নেয়া। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
২. তলাক্বে কেনায়া বা ইঙ্গিত সূচক তলাক্ব। যে শব্দ তলাক্বের জন্য নির্ধারিত নয়। বরং তলাক্ব ও অন্য অর্থেরও সম্ভাবনা রাখে। অর্থাৎ দ্বিবিধ অর্থ জ্ঞাপন করে সেরূপ শব্দ দ্বারা বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করাকে কেনায়া তলাক্ব বলে। কেনায়া তলাক্ব নিয়তের সাথে সংশ্লিষ্ট তলাক্বের নিয়ত করলে তলাক্ব হবে। আর নিয়ত না করলে তলাক্ব কার্যকর হবেনা। (চলবে)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘শীতকাল মু’মিনদের জন্য বসন্ত’
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র রজবুল হারাম মাসে রোযা রাখার ফযীলত
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নফসের অনুসরণকারী ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসরণ করা জায়েজ নেই
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নারীদের জন্য পুরুষদের বেশ বা পুরুষদের নারীবেশ -এটা কাফিরদের রীতিনীতি
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, যা বেপর্দার অন্তর্ভুক্ত
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৯)
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসান মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)