ডিম-মুরগির দাম বাড়লেও ভালো নেই খামারি, বন্ধ ‘হাজারো শেড’
, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) তাজা খবর
মুরগি আর ডিমের দামে আবার লাফের পর ভোক্তাদের নাভিশ্বাস। কিন্তু খামারিরাও ভালো নেই। কারণ, বাচ্চার পাশাপাশি খাবার আর ওষুধের দামেও ঊর্ধ্বগতির কারণে মুরগির দাম বাড়লেও তাদের ভাষায় ‘পোষাচ্ছে না’। তাই বন্ধ হচ্ছে একের পর এক খামার।
মাস দেড়েক আগে ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ করে দিয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের এনামুল হক পান্না। কেন এই সিদ্ধান্ত, জানতে চাইলে বলেন, “সরে আসলাম, কারণ লস হচ্ছিল। এখন মুরগির দাম বাড়লেও মাঝে অনেক কম ছিল। আমার পোষাইল না।”
বছর চারেক আগে খামারির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। দুই শেডে ১ হাজার ৬০০ ব্রয়লার মুরগি পালনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এ ব্যবসা গুটিয়েছেন। আর মুনাফার আশা করে কাজে নেমে লোকসান গুনতে হয়েছে লাখ তিনেক টাকা।
কেন পোষাল না? প্রশ্ন শুনেই পান্না বললেন, “মুরগি তোলার পর থেকেই খাবারের দাম বাড়তেই আছে। যখনই যাই, দেখি- বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি।
“ফিডের মানও একেক সময় একেক রকম। কোনোটার মান খারাপ হলে মুরগির ওজন ভালো আসে না।”
একই এলাকায় খামার ব্যবসায় এখনও টিকে আছেন ফরিদুল হক মিন্টু। গত সপ্তাহে শেডে একদিনের বাচ্চা তুলেছেন প্রতিটি ৫৩ টাকা করে। তবে ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫৩ টাকা দিয়ে মুরগির বাচ্চা কিনে দেড় কেজি ওজনে নিয়ে আসতে ২৫০ টাকার মত খরচ পড়বে।”
খামারিদের দুর্দশার কথা উঠে আসে গেল ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এক সংবাদ সম্মেলনে। সেদিন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, ২০০৯ সালে সারাদেশে ১ লাখ ৬০ হাজার খামার ছিল, এখন টিকে আছে ৬০ হাজার। তার মধ্যে সবগুলোতে এখন মুরগি নেই।
খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে মোটাদাগে মুরগির বাচ্চা আর খাবারের দাম ‘অস্বাভাবিক হারে’ বৃদ্ধিকে দায়ী করেন সুমন।
বাচ্চার দাম ১৫ দিনে সাড়ে তিন গুণ:
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম প্রতিদিনই ওঠানামা করে। উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো নিজেদের মত দাম নির্ধারণ করে তা পরিবেশকদের জানিয়ে দেয় মোবাইলে এসএমএসে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খামারি এনামুল হক পান্না বলেন, “কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছেমত বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে। বাচ্চার রেট বাক্সের গায়ে লেখা থাকে। এরা কীভাবে এটা বসায়- তা আল্লাহ জানে আর তারা জানে। তারা যা সিল দেয় তাই। এই দামেই কেনা লাগে। আমাদের এলাকায় খামারিদের অবস্থা ভালো না। অনেক খামারি বর্তমানে বসে আছে।”
কোম্পানিগুলো সুযোগ পেলে ‘ব্যবসা করে নিতে চায়’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুর রহমান বলেন, “কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ এখন ২৮-৩০ টাকার নিচে না। সেখানে তারা যখন কম দামে বিক্রি করে, তখন তাদের অনেক লস হয়। ব্রিডিংয়ের জন্য যে ডিম আসে- সেটা তো না ফুটিয়ে রাখা যায় না, খাওয়ার ডিম হিসেবে বিক্রি করলেও লস।
খাবার আর ওষুধের দামের চাপ:
বছর দুয়েক আগে কুষ্টিয়ার খামারি পান্নার দিন ভালোই যাচ্ছিল। খাবারের দাম ছিল কম, তাই বেশি দামে বাচ্চা তুলেও লাভের মুখ দেখেছেন।
তিনি বলেন, “তখন বস্তাভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কম ছিল। কিন্তু এখন খাবার, ওষুধের দাম, লেবার খরচ সবকিছু বেশি। সব কোম্পানির হাতে।”
সাভারের এক খামারি জানালেন, প্রতি ১০০ মুরগির বিক্রি উপযোগী হতে ৩০০ কেজি পর্যন্ত খাবার লাগে। ক্যালকুলেটর চেপে দেখা যায়, প্রতি মুরগিতে দেড় মাসের ব্যবধানে শুধু ফিডের দাম বাড়ার কারণে খামারির খরচ বেড়ে যাচ্ছে সাড়ে ৭ টাকা। ১০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আরও ১০০ টাকা বাড়ায় আরও ৬ টাকা খরচ বাড়ছে।
ফিডের সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়েছে ওষুধেরও। রাজশাহীর বাঘা এলাকার খামারি মনোয়ার হোসেন বলেন, “ওষুধের দাম আগে যেটা ৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ১০০ টাকা।”
ফিড ও বাচ্চা ব্যবসায়ী নেতাদের ভাষ্য:
খামারিদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বারবার বলছি- ফিডের কাঁচামালের দাম ৬০-৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ডলারের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। আমরা তো আমদানিকারক দেশ। আপনারা দেখছেন আমরা যেসব পণ্য কিনি- আটা, গম, ভুট্টা সবই কৃষিজ উপাদান আর সবকিছুর দাম বেশি। আমদানি খোলা নেই, সংকট তো হবেই।”
এসিআই গোদরেজ এগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেডের এই অ্যাসোসিয়েট ভাইস-প্রেসিডেন্ট বলেন, “অনেকেই নিজেদের খামারিদের নেতা দাবি করে, কিন্তু তারা কেউ খামারি না। খামারিদের ওপর চাপ না। মানুষ যে ১০ টাকা সাড়ে ১০ টাকায় ডিম খেতে চায়- সেটাই অন্যায়। উৎপাদন খরচের কম দামে চাইলে হবে না। দেশে অন্য সবকিছুর দাম বেশি, তবু শুধু ডিম আর ব্রয়লারের দাম বাড়লেই সবার চুল খাড়া হয়ে যায়।”
নজরুল ইসলাম বলেন, “বাচ্চা যখন ১০ টাকার নিচে ছিল, ফিডের দাম কম ছিল- তখন তারা কথা বলেনি, কেউ বলেনি। লস দিয়েছি আমরা। এখন তেলের দাম, বিদ্যুতের দাম- সব বেড়ে গেছে, দাম না বাড়িয়ে কী করব? বাড়ানোর পরও তো আমরা লসে আছি, কেউ স্বস্তিতে নেই।
“আপনারা খবর নিন, দেশে ২০০টি নিবন্ধিত ফিড মিল আছে, এখন কয়টা ফিড মিল চালু আছে? ব্যবসায় লাভ হলে তো সব কোম্পানি খোলা থাকত। আমরা প্রতিনিয়ত লসের মধ্যে আছি। গ্রামগঞ্জে কত ফিড মিল বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র ৬০-৭০টা ফিড মিল চালু আছে।”
আলোচনায় সমাধান খুঁজছে মন্ত্রণালয়:
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদ বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আছে, প্রতিনিয়ত আমরা এটি দেখছি- ফিড-বাচ্চার দাম বেড়ে গেছে; মুরগি উৎপাদনে যে খরচ- তা উঠে আসছে না। এই সমস্যা একদিনের না, অনেক দিন আগে থেকে চলছে। খাদ্যের দাম বাড়াটাই মূল, এর প্রভাব অন্যান্য জায়গায় পড়ছে। ক্রমাগতভাবে আমরা অংশীজনদের নিয়ে বসছি।”
পোলট্রি নীতিমালা ও পোলট্রি ফিড নীতিমালা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, “নীতিমালা যেটা আছে, সেটা আপডেট হবে। নতুন করে আমরা সবার মতামত নিয়ে এটি রিভাইজ করেছি, খসড়া অবস্থায় আছে আছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক শক্তিশালী অভিযান পরিচালনা করেছেন মুজাহিদ বাহিনী
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গাজায় শহীদের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘বাজারেই দর বেশি, কষ্ট করে গুদামে নেব কেন’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘বাজারেই দর বেশি, কষ্ট করে গুদামে নেব কেন’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাজারে কোন কিছুর দামেই নেই স্বস্তি
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অটোরিকশা বন্ধে বেকার হবে ২৫ লক্ষ মানুষ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বরেন্দ্র অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ -্‘এই খাতে জড়িত কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের কি হবে?’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুজাহিদ বাহিনী যৌথভাবে দখলদারদের একাধিক স্থানে মর্টার শেলিং করেছে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হামলার ভয়ে ইউক্রেনে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে হাজার কোটির মালিক আ.লীগ নেতা দিলীপ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রাজনৈতিক দল হিসেবে কাউকে বাধা দিতে পারি না
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)