ডায়াবেটিস রোগীর সচেতনতায় যা যা করণীয়
, ২৪শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্য
আমরা শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় কিছু খেলে সেটা আমাদের শরীরে গিয়ে ভেঙে গ্লুকোজ হয়। রক্তে এই গ্লুকোজ বেড়ে গেলেই আমরা বলি ব্লাড সুগার বেড়ে গেছে। আমরা যে রক্ত দিয়ে ডায়াবেটিস মাপি, সেটা এই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণই মাপি।
আমরা শর্করা খেলে আমাদের বডি ইনসুলিন রিলিজ করে। ইনসুলিনের কাজ হল রক্তের গ্লুকোজ শরীরের কোষে ঢুকিয়ে দেয়া। কিন্তু এই ইনসুলিন অনেক সময় শরীরে থাকার পরও কাজ করতে পারে না। কিংবা ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইনসুলিনের এই অকার্যকারিতার ফলাফলই হলো ডায়াবেটিকস।
আমরা সাধারণত চার ধরনের ডায়াবেটিসের কথা বলি। টাইপ-১, টাইপ-২, জেস্টেশনাল এবং অন্যান্য।
টাইপ-১ মানে হলো, যেভাবেই হোক, যাদের শরীরে ইনসুলিন নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে রোগী মারা যেতে পারেন। আমরা যখন বাইরের নানা ধরনের খাবার খাই, ফাস্ট ফুড খাই, তখন শরীরে একধরনের পরিবর্তন আসে। দেখা যায়, শরীরে ইনসুলিন আছে, কিন্তু সেটা কাজ করতে পারছে না। তখন আমরা যে খাবারই খাই, সেটার গ্লুকোজ জমে যায়। এটা টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
-ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা।
-ঝাপসা ঝাপসা দেখা।
-ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করা।
-ঘা নিরাময় ধীরে ধীরে হওয়া।
-চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
-স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগা।
-স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পিপাসা লাগা।
-মাড়ি, ত্বক এবং লজ্জাস্থান ঘন ঘন রোগাক্রান্ত হওয়া।
-খিটখিটে বোধ করা বা দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন হওয়া।
ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা: জীবনধারা এবং দৈনন্দিন রুটিন:
ডাক্তার দ্বারা সুপারিশকৃত সীমার মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হরো, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করবে।
খাদ্য:
ডায়াবেটিস সহ বা ছাড়াই স্বাস্থ্যকর খাওয়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মূল ভিত্তি। কিন্তু আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে খাবার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এটি শুধুমাত্র আপনি যে ধরনের খাবার খান তা নয়, আপনি কতটা খাচ্ছেন এবং আপনি কোন ধরনের খাবার খান তার উপরও নির্ভর করে।
-সুষম খাবার গ্রহণ করা ।
-আপনার খাবার এবং ওষুধ সমন্বয় রাখা।
-চিনি-মিষ্টি পানীয়/খাবার এড়িয়ে চলা।
ব্যায়াম:
আপনি যখন ব্যায়াম করেন, আপনার পেশী শক্তির জন্য চিনি (গ্লুকোজ) ব্যবহার করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আপনার শরীরকে আরও দ্রুত দক্ষতার সাথে ইনসুলিন ব্যবহার করতে সহায়তা করবে। ব্যায়ামে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে কাজ করে। ওয়ার্কআউট যত বেশি হবে, এর প্রভাব তত দীর্ঘ হবে। এমনকি হালকা ক্রিয়াকলাপ, যেমন বাড়ির কাজ করলে, বাগান করলে বা দীর্ঘ সময়ের পায়ে হাঁটলে, রক্তে শর্করার পরিমাণ উন্নত হয়ে থাকে।
ঔষধ:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র ডায়েট এবং ব্যায়াম যথেষ্ট নয়। ইনসুলিন এবং অন্যান্য ডায়াবেটিসের ওষুধগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধের কার্যকারিতা ডোজের সময় এবং আকারের উপর নির্ভর করে। ডায়াবেটিস ব্যতীত অন্যান্য সমস্যার জন্য আপনি যে ওষুধগুলি গ্রহণ করেন তা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
অসুস্থতা:
আপনি যখন অসুস্থ হন, আপনার শরীর স্ট্রেস-প্রতিরোধের হরমোন তৈরি করে যা আপনার শরীরকে অসুস্থতা প্রতিরোধে সাহায্য করে, সেক্ষেত্রে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়তে পারে। আপনার ক্ষুধা এবং স্বাভাবিক কার্যকারিতার পরিবর্তন ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলতে পারে।
ঋতুস্রাব এবং মেনোপজ:
ঋতুস্রাবের এক সপ্তাহ আগে এবং সময়কালে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তনের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্য ওঠানামা হতে পারে।
মানসিক চাপ:
আপনি যদি মানসিক চাপে থাকেন, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়ায় আপনার শরীর যে হরমোনগুলি তৈরি করে তা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। উপরন্তু, আপনি যদি অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকেন তবে আপনার স্বাভাবিক ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার রুটিন পরিপূর্ণ অনুসরণ করা কঠিন হতে পারে।
আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলি সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন, তত বেশি আপনি শর্করার ওঠানামা অনুমান করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারবেন। আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হলে, আপনার ডায়াবেটিস স্বাস্থ্যসেবা চিকিৎসকের সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন।
-ডা: সাইয়্যিদা আলিশা আশরাফ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জন্মের ২য় মাসে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আসছে শীত, নিজের যত্ন নিবেন যেভাবে
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পাইলস কি এবং কাদের হয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
টুথপেস্ট-সাবানের জন্যও হতে পারে হাড়ক্ষয়
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
খাদ্যের কাজ ও উপাদান (২)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উচ্চ রক্তচাপ কেন নীরব ঘাতক
২৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লোহিত রক্তকণিকা বাড়ানোর উপায়
০৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা
২৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
তীব্র গরমে শরীরের জন্য উপকারী যেসব ফল
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাবদাহে কিভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন?
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে গ্যাস্ট্রিক
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)