চট্টলার বীর মুহম্মদ রজব আলী খাঁ: যার বীরত্বে কাবু হয়েছিলো ব্রিটিশ বেনিয়ারা
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
বিদ্রোহের আগে ৪ নম্বর কোম্পানির হাবিলদার পদে উত্তীর্ণ হন এই বীর সিপাহি। কোম্পানির সেনাবাহিনীর ৩৪ নম্বর নেটিভ বেঙ্গল পদাতিক বাহিনীর ১২০ জন হাবিলদার ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে পরহেজগার ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি রজব আলী ছিলেন তাদের একজন। ক্যাপ্টেন পিএইচকে ডিউলের অধীনে চট্টগ্রাম পাহাড়তলী সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডের সেনানিবাসে থাকতেন তিনি।
১৮ নভেম্বর রাতে স্বাধীনতাকামী মুসলিম সেনাসদস্যরা গুলি ছুড়ে বিদ্রোহের জানান দেন। তারা প্রথমেই জেলের তালা ভেঙে আটক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুক্ত করেন। একদল মুসলিম সিপাহি রজব আলীর নেতৃত্বে বন্দরনগরীর অস্ত্রাগার এবং কোষাগার দখল করেন এবং সেখান থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করেন। সৈন্যব্যারাক দখল করে অস্ত্র সংগ্রহ করে নিয়ে অস্ত্রোগারটি পুড়িয়ে দেন তারা। বিদ্রোহের আকশ্মিকতায় চট্টগ্রামে থাকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জালিমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে থাকা জাহাজে আত্মগোপন করে।
চট্টগ্রামে সংঘবদ্ধ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন তিনি। জানা যায়, হাবিলদার রজব আলী খাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম প্রায় ৩০ ঘণ্টা ব্রিটিশ শাসনমুক্ত রাখা হয়েছিল। এই বিদ্রোহের সময় গুলি বিনিময়কালে একাধিক মুসলিম সৈন্য শহীদ হন। যাদের কবর দেওয়া হয় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের আঙিনায়।
১৯ নভেম্বর রাতে সিপাহিরা পিলখানা থেকে হাতি নিয়ে সদলবলে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। মুসলিম সেনারা উত্তর দিকে চলে যান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় অবস্থানরত ৭৩ নম্বর দেশীয় পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেওয়া। কিন্তু তার আগেই ঢাকায় অবস্থানরত সিপাহীদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাদের শহীদ করা হয়। এদিকে চট্টগ্রামের সিপাহীরা বিভিন্ন জায়গায় বাধার মুখোমুখি হলে রজব আলী এবং বাকি মুসলিম সিপাহিরা ফেনী নদী অতিক্রম করে সীতাকুন্ড হয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। তবে তিনি সংবাদ পান যে, তাদেরকে ঘেরাও করার জন্য ফেনী নদীর তীরে অবস্থান করছে বিপুল ব্রিটিশ জালিম।
তাই রাস্তা পরিবর্তন করে কুমিল্লার পাহাড়ি এলাকার দিকে অগ্রসর হন সবাই। পরবর্তীতে মুসলিম সেনারা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মণিপুর রাজ্যের কাছাকাছি সিলেট পৌঁছে যান। সীমান্তবর্তী এলাকায় সিলেট লাইট ইনফ্যান্ট্রির মেজর বাইং সেখানে মুসলিম সেনাদের উপর হামলা করে। মুসলিম সেনাদের পাল্টা প্রতিরোধে বাইং নিহত হয় এবং তার অধীন ইংরেজ বাহিনী পরাজিত হয়। পর পর কয়েকটা যুদ্ধে রজব আলীর পক্ষের অনেক সিপাহি শহীদ হন। যারা বেঁচে ছিলেন আক্রমণের তীব্রতায় শেষ পর্যন্ত তাদের পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।
রজব আলী খাঁ শেষবারের মতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হন করিমগঞ্জের মালগ্রামে। মুসলিম বাহিনী পার্বত্য এলাকা জেলা কাছাড়, হাইলাকান্দি ইত্যাদি পাড়ি দিয়ে মোহনপুর চা বাগানের নিকটবর্তী সাবাশপুরে অবস্থান নেন। কিন্তু স্থানীয় গাদ্দার জমিদারের চরদের মাধ্যমে ইংরেজ বাহিনী সে খবর পেয়ে যায় এবং লেফটেন্যান্ট রসের নেতৃত্বে অতর্কিতে হামলা করা হয়। হাবিলদার রজব আলী তার অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে বীর বীক্রমে যুদ্ধে যোগ দেন। সেই যুদ্ধে ৭০ জন মুসলিম সিপাহী যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। হাবিলদার রজব আলী খাঁসহ তিন বা চারজন সিপাহি শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কোম্পানির বাহিনীর অব্যাহত অনুসরণের মুখে তারা গহিন পাহাড়ি জঙ্গলে চলে যান। ইংরেজ বাহিনীর ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবেও কেউ আর কোনোদিন বীর যোদ্ধা রজব আলীকে দেখেননি।
ইতিহাসে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলা হলেও সেই তালিকায় রাখা হয়নি মুহম্মদ রজব আলীকে। অথচ তিনিই স্বাধীনতা আন্দোলনের সুচনা করেছিলেন অত্র অঞ্চলে। বলা হয়ে থাকে, মুসলিম হওয়ার কারণেই ইতিহাসবিদ নামধারী কিছু কলমসন্ত্রাসীরা তার বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস মুছে দেবার চেষ্টা করেছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)