গরানীক্ব ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনা এবং মুসলমানদের সাথে মুশরিকদের সিজদাহ্ বিষয়ে মওযূ হাদীছ ও তার খণ্ডনমূলক জবাব: (৭)
, ০১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২২ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২২ মে, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
‘ক্বিছ্ছাতুল গরানীক্ব বা গ¦রানীক্বের ঘটনা’ হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ একটি বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা। মিথ্যাবাদীরা বলে থাকে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখলেন উনাকে উনার সম্প্রদায়ের লোকজন পরিত্যাগ করছে এবং তিনি তাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন উনার নিকট বিষয়টি কষ্টকর হয়ে পড়লো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমানের বিষয়ে দয়াপরবশ হয়ে মনে মনে আকাঙ্খা মুবারক করলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যাতে এমন কিছু নাযিল হয়, যা উনার মাঝে এবং উনার সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে কাছাকাছি হবে, নিকটবর্তী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এমতাবস্থায় একদিন কুরাইশদের অনেক লোকের এক মজলিসে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি ইচ্ছা করছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যেন উনার নিকট এমন কিছু না আসেন, যাতে কুরাইশরা উনার থেকে দূরে চলে যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই আকাঙ্খা মুবারক উনার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ নাযিল করেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পাঠ করতে করতে যখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ পর্যন্ত পৌঁছলেন-
اَفَرَاَيْتُمُ اللّٰتَ وَالْعُزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى
‘তোমরা কি লাত ও উয্যা সম্পর্কে লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না? এবং ৩য় অপর একটি মানাত সম্পর্কে কি লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না?’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯-২০)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক উনার মাঝখানে উনার ন্যায় সুমধুর সূরে শয়তান মুশরিকদের মূর্তির প্রশংসামূলক কিছু বাক্য প্রবেশ করিয়ে দেয়। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
আবার কেউ কেউ বলে, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যবান মুবারক-এ) শয়তান নিক্ষেপ করলো,
تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَهُنَّ لَتُرْتَجٰى
‘এগুলো (এই মূর্তিগুলো) খুব সুন্দর, খুব ছূরত পাখির মতো এবং আশা করা যায় যে এগুলো অবশ্যই (মুশরিকদের জন্য) সুপারিশ করবে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
শয়তান এই কুফরীমূলক বাক্য এমনভাবে প্রবেশ করিয়ে দেয় যে, উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং মুশরিকরা সবাই বুঝে যে, এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বাক্য। কোনক্রমেই কেউ তা পার্থক্য করতে সক্ষম হয়নি। না‘ঊযুবিল্লাহ! কুরাইশরা এটা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়। না‘ঊযুবিল্লাহ!
অত:পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করতে করতে পুরো সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষে সম্মানিত সিজদাহ্ মুবারক করেন। তখন উনার সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাও সিজদাহ্ করলেন এবং মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে ছিলো তারা সকলেই সিজদাহ্ করলো। ঐ সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং মুশরিকরা যারা ছিলো কেউই সিজদাহ্ করা থেকে বিরত থাকেনি। একমাত্র ওলীদ ইবনে মুগীরা এবং আবূ উহাইহাহ্ সাঈদ ইবনে আছ তারা দুইজন সিজদাহ্ করলো না। তারা যমীন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে সেটাতে সিজদাহ্ করলো। কারণ তারা দু’জনেই ছিলো অতিবৃদ্ধ, তাই তারা সিজদাহ্ করতে সক্ষম ছিলো না। কুরাইশরা বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) আলোচনা যা শুনেছে, সে জন্য খুশি প্রকাশ করে বলাবলি করছিলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) সর্বোত্তম আলোচনা করেছেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দুঃখ ভারাক্রান্ত হলেন, তখন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! একি করলেন আপনি? না‘ঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি যা নিয়ে আসিনি, আপনি মানুষদের নিকট তা তিলাওয়াত মুবারক করেছেন। আর আপনি যা বলেছেন আমি তো আপনাকে তা বলিনি।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি وَمَآ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
কেউ কেউ আরো অনেক খারাপভাবে এই ঘটনা বর্ণনা করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ অনুরূপ আরো যত বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বণর্নাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এ ধরণের কোন ঘটনাই সংঘটিত হয়নি। কখনও মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে সিজদাহ্ করেনি। শয়তান কখনও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক উনার সাথে তার কথা মিলায়নি। এরূপ চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এগুলো সব বানানো কিচ্ছা-কাহিনী। এগুলো একটাও গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী হবে। বর্ণনাকারীরা ইসরাঈলী বর্ণনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এগুলো বর্ণনা করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এরূপ কুফরী আক্বীদাহ্ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন।” সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
নি¤েœ এই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন র্ণনাসমূহের দলীলভিত্তিক খ-নমূলক জবাব তুলে ধরা হলো-
দলীলভিত্তিক খ-নমূলক জবাব:
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আল ইমামুল কাবীর, মাফ্খরাতুল মাগরিব হযরত ইমাম কাযী আবুল ফযল আয়ায ইবনে মূসা ইয়াহ্চুবী সাব্তী মালিকী আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৪৭৬ হিজরী শরীফ এবং বিছাল শরীফ ৫৪৪ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
وَصَدَقَ حَضْرَتْ اَلْقَاضِىْ بَكْرُ بْنُ الْعَلَاءِ الْمَالِكِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَيْثُ قَالَ لَقَدْ بُلِىَ النَّاسُ بِبَعْضِ اَهْلِ الْاَهْوَاءِ وَالتَّفْسِيْرِ وَتَعَلَّقَ بِذٰلِكَ الْمُلْحِدُوْنَ مَعَ ضَعْفِ نَقَلَتِهٖ وَاضْطِرَابِ رِوَايَاتِهٖ وَانْقِطَاعِ اِسْنَادِهٖ وَاخْتِلَافِ كَلِمَاتِهٖ
অর্থ: “হযরত ইমাম কাযী বকর ইবনে আলা’ মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যা বলেছেন, সত্য কথা বলেছেন। কিছু বিদয়াতী, নফসের অনুসারী ও তাফসীরকারকদের কারণে মানুষ পরীক্ষায় পড়ে গেছে। আর বর্ণনাসমূহের দূর্বলতা, রেওয়ায়েতের ভিন্নতা, সনদের বিচ্ছিন্নতা এবং শব্দগত পার্থক্যের কারণে এ বিষয়ে নাস্তিকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।” (শিফা শরীফ ২/২৯০)
তিনি আরো বলেন,
وَلَا شَكَّ فِىْ اِدْخَالِ بَعْضِ شَيَاطِيْنِ الْاِنْسِ اَوِ الْجِنِّ هٰذَا الْحَدِيْثَ عَلٰى بَعْضِ مُغَفَّلِى الْمُحَدِّثِيْنَ لِيُلَبِّسَ بِهٖ عَلـٰى ضُعَفَاءِ الْمُسْلِمِيْنَ
অর্থ: “এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, জিন বা মানুষের মধ্য থেকে কিছু শয়তান- যারা হাদীছ বর্ণনাকারী কতিপয় গাফিল-নির্বোধ লোকদের মাঝে এই হাদীছ প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। যাতে করে এর দ্বারা দূর্বল মুসলমানরা সংশয়, সন্দেহ ও ফেতনার মধ্যে পতিত হয়।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (শিফা শরীফ ২/২৯৫)
ইমামুল আইম্মাহ্ হযরত ইবনে খুযায়মাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اِنَّ هٰذِهِ الْقِصَّةَ مِنْ وَضْعِ الزَّنَادِقَةِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই এই ঘটনাটি যিন্দিক্বদের প্রবর্তন অর্থাৎ জিন্দিকরা এই মওযূ হাদীছ বর্ণনা করেছে।” (ফাতহুল ক্বাদীর লিশ শাওকানী ৫/১২৮, যখীরতুল উক্ববাহ্ ১২/৩৮৩)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ كَثِيْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اِنَّهٗ لَمْ يَرَهَا مُسْنَدَةً مِّنْ وَجْهٍ صَحِيْحٍ وَقَالَ حَضْرَتْ اَلشَّوْكَانِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَمْ يَصِحَّ شَىْءٌ مِّنْ هٰذَا وَلَا يَثْبُتُ بِوَجْهٍ مِّنَ الْوُجُوْهِ وَعَنْ حَضْرَتْ اَلْبَزَّارِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهَا لَا تُرْوٰى بِاِسْنَادٍ مُتَّصِلٍ وَعَنْ حَضْرَتْ اَلْبَيْهَقِىِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهٗ قَالَ هِىَ غَيْرُ ثَابِتَةٍ مِّنْ جِهَةِ النَّقْلِ وَقَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ خُزَيْمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هٰذِهِ الْقِصَّةُ مِنْ وَضْعِ الزَّنَادِقَةِ
অর্থ: “হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই এটা ছহীহ হিসেবে কোনো সনদযুক্ত হাদীছে বর্ণিত নেই’। হযরত শাওকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘এর কোনোটিই সত্য নয় এবং এটি কোনোভাবেই প্রমাণিত নয়’। হযরত বায্যার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত (তিনি বলেন), ‘নিশ্চয়ই এটা কোনো মুত্তাছিল সনদে বর্ণিত নেই’। হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, ‘এটা ধারাবাহিক বর্ণনা সূত্রে অর্থাৎ মুত্তাছিল সনদে প্রমাণিত নয়’। ইমামুল আইম্মাহ্ হযরত ইবনে খুযায়মাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি যিন্দিক্বদের প্রবর্তন’।” (আদ্বওয়াউল বয়ান ৫/২৮৬-২৮৮)
আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَقَالَ اللهُ تَعَالٰى لَا يَأْتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهٖ يَعْنِى اِبْلِيْسَ وَمِنْ هَاهُنَا قَالَ حَضْرَتْ اَلْبَيْضَاوِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ يَعْنِىْ مَا ذَكَرَ فِىْ شَأْنِ نُزُوْلِ الْاٰيَةِ وَاِلْقَاءُ الشَّيْطَانِ فِىْ قِرَاءَةِ سُوْرَةِ النَّجْمِ مَرْدُوْدٌ عِنْدَ الْمُحَقِّقِيْنَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মিথ্যা কথা আসতে পারবে না, সামনে থেকেও না, পেছন থেকেও না।’ সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফুছ্ছিলাত শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪২) অর্থাৎ ইবলীস (আসতে পারবে না)। এই বিষয়ে ইমাম হযরত বায়যাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সেটা অর্থাৎ ‘এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নুযূলের বিষয়ে এবং সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ উনার তিলাওয়াতের মধ্যে শয়তানের কথা নিক্ষেপ করার বিষয়ে’ যা উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত মুহাক্কিক্বীন উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট তা বর্জিত।” (তাফসীরে মাযহারী ৬/৩৩৮)
আল্লামা হযরত ইমাম আলূসী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَمِنْهَا كَوْنُهٗ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِشْتَبَهَ عَلَيْهِ مَا يُلْقِيْهِ الشَّيْطَانُ بِمَا يُلْقِيْهِ عَلَيْهِ الْمَلَكُ وَهُوَ يَقْتَضِىْ اَنَّهٗ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى غَيْرِ بَصِيْرَةٍ فِيْمَا يُوْحٰى اِلَيْهِ وَيَقْتَضِىْ اَيْضًا جَوَازَ تَصَوَّرَ الشَّيْطَانُ بِصُوْرَةِ الْمَلَكِ مُلَبَّسًا عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا يَصِحُّ ذٰلِكَ كَمَا قَالَ فِى الشِّفَاءِ لَا فِىْ اَوَّلِ الرِّسَالَةِ وَلَا بَعْدَهَا وَالْاِعْتِمَادُ فِىْ ذٰلِكَ دَلِيْلُ الْمُعْجِزَةِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি যা নিয়ে আসেন, তার মধ্যে শয়তান কোনো কিছু নিক্ষেপ করেছে (এরূপ মনে করা বা বলা) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সন্দেহপূর্ণ হওয়ার নামান্তর। এই বিষয়টি এটাই দাবি করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক করা হয়েছেন, তাতে তিনি অন্তর্দৃষ্টিহীন ছিলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আর এটাও দাবি করে যে, হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনার আকৃতিতে শয়তান আকৃতি ধারণ করতে পারা বৈধ হয়। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সন্দেহপূর্ণ হওয়ার নামান্তর। এটা কখনোই সঠিক নয়। যেমন হযরত কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আশ শিফা’ গ্রন্থে বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রিসালতী শান মুবারক প্রকাশ উনার পূর্বে বা পরে কখনোই এরকম হয়নি। আর এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মু’জিযা শরীফ উনার প্রমাণ সাব্যস্ত হয়।” সুবহানাল্লাহ! (রূহুল মা‘আনী ৯/১৬৯)
(পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন)
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ্ আলাইহিস সালাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৮)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)