খাদ্যদ্রব্যে অতিরিক্ত ভেজাল মিশ্রণে হুমকির মুখে ২৫ কোটি মানুষ।
ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
, ১১ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২০ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সম্পাদকীয়
বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাবারের কারণে প্রতিবছর অসুস্থ হন। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভেজাল খাবার খেয়ে দেশের ২৫ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাবার তৈরি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন জরুরি। দৈনিক আল ইহসান শরীফের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভেজাল ঢুকে গেছে। বেশি লাভের আশায় অনেকে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শক্ত হাতে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় এ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
স্বীকৃত হিসাব অনুযায়ীই বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। ডায়াবেটিস এখন মহামারীরূপে দেখা দিয়েছে। অপরদিকে স্বীকৃত হিসাব মতে- কিডনী রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের কিডনী স্থায়ীভাবে বিকল হচ্ছে। দেশের কিডনী রোগীদের মাঝে ২০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পেলেও ৮০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে মারা যায়।
অনেকে না জানলেও বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড়কোটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশের ১ কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত এবং বাকীরা হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। বছরে প্রায় ৫০ হাজার লোক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
পাশাপাশি, দেশে হৃদরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমান অন্যান্য দেশের তুলনায় হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশেই বেশি। এমনকি এ রোগের কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছে, দেশের প্রায় ত্রিশ শতাংশ লোকই হৃদরোগে আক্রান্ত।
ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদী ও মারাত্মক রোগের নাম হচ্ছে ক্রোনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি (সিওপিডি)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। পাশাপাশি দেশে হাঁপানী রোগীর সংখ্যাও ১ কোটিরও বেশি এবং প্রতিবছর আরো ৫০ হাজার লোক হাঁপানী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অপরদিকে বাংলাদেশে থাইরয়েড সেন্টারের হিসেব মতে, ২ কোটিরও বেশি লোক থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ব্লাইন্ডনেস এবং লো ভিশন সার্ভের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫ শতাংশ লোক কমদৃষ্টি সম্পন্ন রোগী। আর শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগী অনেক। এছাড়া বর্তমান অস্থির সামাজিক পরিবেশেও শিশুদের মধ্যে ১৮.৪ ভাগ মানসিক রোগী। অটিজমে আক্রান্ত শিশু এক লাখেরও বেশি। আর পূর্ণ বয়স্কদের মধ্যে আড়াই কোটিরও বেশি মানসিক রোগী; যাদের জন্য ডাক্তার মাত্র ২২০ জন। এদিকে দেশে শিশু কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। কয়েকটি জেলায় কুষ্ঠ রোগীর হার ১০ হাজারে ১ এর বেশি। আর বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর ১০ শতাংশই বাংলাদেশী।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ ও ডেনস্ট্রিস্টি অ্যান্ড এন্ডোডনটিকস বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে শুধু নাক-কান-গলা-দাত ও মুখের রোগীই ২০ কোটিরও বেশি।
উল্লেখ্য, সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) ল্যবরেটরি পরীক্ষায় দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্যে মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সারাদেশ থেকে সংগৃহীত এসব ভোগ্যপণ্যে কেমিক্যাল ও কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। ফলে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মানবদেহে রোগব্যাধি আক্রান্তের হার ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে কীটনাশক ও সংরক্ষণ পর্যায়ে ফরমালিনসহ রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার খাদ্য বিষে রূপান্তরিত করছে। আর এসব ভেজাল মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণে মানুষের কিডনি নষ্ট, লিভারসিরোসিস, হার্ট অ্যাটাক, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট ও প্রজণন ক্ষমতা হ্রাসের মতো জটিলতা বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ নং- ১৫ এবং ১৮-এ বলা আছে সরকার জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করবে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বা সরবরাহ-ই হবে সরকারের অন্যতম কাজ। কিন্তু সরকার আজ সেখানে ব্যর্থ। অবাধ প্রতিযোগিতা, মুনাফা অর্জনের জন্য লালায়িত মানসিকতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা ইত্যাদি কারণে বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। ১৮৬০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২০টির অধিক ভেজালবিরোধী আইন হয়েছে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি যে, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধাঁয় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের সৃষ্টিকর্তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সবচেয়ে গরিব কে? অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে গরিব ওই ব্যক্তি- যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকী নিয়ে উঠবে। মানুষ মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকি দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও পাওনাদার বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ ব্যক্তিকেই সবচেয়ে গরিব বলা হয়েছে।
ছহিবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দেশে সাড়ে ৩ কোটি শুধু শিশুই সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং সব প্রাপ্ত বয়স্করাও ক্ষতিগ্রস্থ সিসার ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুন্নতী তৈজসপত্র ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্রের জিনিস ক্রয়ে নিবেদিত হতে হবে ইনশাআল্লাহ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাব্যার্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আরো ক্ষমতা দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জ্বালানী তেলের দাম এক্ষুনি কমাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অনেক কিছু করার প্রচারনা চালালেও জিডিপি এবং দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি অর্থনীতির লাইফ লাইন এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করছে না
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, মুসলমানের দ্বীনি অধিকার, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনের আবহ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়।
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সিঙ্গাপুর, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ বাংলাদেশেও বিভিন্ন মহলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবী জোরদার হচ্ছে, সংস্কারের দাবীদার সরকার কী করে নির্বিকার থাকতে পারে?
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ও হয়রানী জান-মাল এবং সম্মান হিফাজতে সরকারকে এক্ষুনি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পাচারকৃত ১৭ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে শামুকের মত ধীর গতি বরদাশতের বাইরে
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সোনার বাংলার আরেক সোনালী অর্থনীতি- মৎস্য সম্পদ এর সমৃদ্ধির সুফল জনগণের হাতে যথাযথভাবে তুলে দিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস এখন জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ নারিকেল দ্বীপ বাঁচানোর মিথ্যা প্রচারণার আগে সত্যিকার অর্থে ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। ইনশাআল্লাহ!
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সরকারের নির্দেশ আর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কমানো হচ্ছে না শিশুর কাধে ১২ কেজির বইয়ের বোঝা সংস্কারের দাবীদার- নতুন সরকার কী নতুন বছরে শিশুর কাধে বইয়ের বোঝা কমাবে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বীজ আইন সংস্কার করে শস্যের বীজে কৃষকের আসার নিশ্চিত করতে হবে।
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)