জীবনী মুবারক
খাদিমু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
বিলাদত শরীফ: হিজরতপূর্ব ১০ সন বিছাল শরীফ: ৯৩ হিজরী বয়স মুবারক: ১০৩ বছর
, ০৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন। তিনি ১০০ বৎসরের বেশী হায়াত মুবারক পেয়েছিলেন এবং ৮২ জন ছেলে-মেয়ে রেখে যান। উনাদের মধ্যে ৮০ জন ছেলে এবং ২ জন মেয়ে ছিলেন। আর নাতী-নাতনী সহকারে এই সংখ্যা শতাধিক হয়েছিলেন। বিছাল শরীফের সময় বিভিন্ন এলাকায় উনার চারটি বাড়ী ছিল। সন্তানদের প্রতি উনার ছিল অত্যধিক স্নেহ-মমতা। ছেলে মেয়েদেরকে নিজেই শিক্ষা দিতেন। উনার কয়েকজন ছেলে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের সম্মানিত শায়েখ ও ইমাম রূপে স্বীকৃত হন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন একজন দক্ষ তীরন্দাজ। এ বিদ্যা তিনি সন্তানদেরকেও অনুশীলন করাতেন। ছেলেরা প্রথমে নিশানা ঠিক করে তীর ছুড়তেন। উনারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি ছুঁড়তেন এবং সঠিকভাবে তা লক্ষ্যভেদ করত। তীর ছোঁড়ার অনুশীলন প্রাচীন জাহিলিয়াতের সময় থেকেই আনছারদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। (উসুদুল গাবা)
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভয়-ডর শূণ্য দুঃসাহসী। খুব দৌঁড়াতে পারতেন। একবার ‘মাররুজ জাহরান’ নামক স্থানে একটি খরগোশ তাড়া করে ধরে ফেলেন। অথচ উনার সমবয়সী ছেলেরা খরগোশটির পিছনে তাড়া করে ফিরে আসে। বড় হয়ে তিনি নিপুন অশ্বারোহী ও দক্ষ তীরন্দাজ হন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকের জন্য এবং শরীয়তে উনার প্রগাঢ় ইলিম (জ্ঞান) থাকার জন্য সমাজে উনার যথেষ্ট গূরুত্ব ছিল। প্রতিটি মানুষ উনাকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও মুহব্বত মুবারকের চোখে দেখত। উনার ছাত্র প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ভক্তি ও শ্রদ্ধার আতিশয্যে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করতেন।
একবার হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবুল আলিয়্যাকে একটি আপেল দিলেন। আপেলটি হাতে নিয়ে তিনি শুঁকতে, চুমু খেতে ও মুখে ঘষতে লাগলেন। তারপর বললেন, এই আপেলে এমন মুবারক হাতের স্পর্শ লেগেছে যেই হাত মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল মাগফিরাত বা হাত মুবারক স্পর্শ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এতদসত্বেও উমাইয়া শাসকদের অনেকেই উনার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। এসব স্বেচ্ছাচারী শাসকদের নেতা ছিল অত্যাচারী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন চরম ধৈর্য অবলম্বন করেছিলেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সারা জীবন ইলমে হাদীছ শরীফ উনার প্রচার-প্রসারে অতিবাহিত করেন। তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ শিক্ষা দানের আওতা থেকে কখনও বাইরে যাননি। অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন জিহাদের ময়দানে ছিলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই খাদিম দুনিয়া থেকে পৃথক হয়ে বছরার জামে মসজিদে বসে মানুষকে পবিত্র হাদীছ শরীফ শোনাতেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইলিমের (জ্ঞানের) প্রসারতা উনার ছাত্রদের সংখ্যা দ্বারাই অনুমান করা যায়। উনার হালকায় দরসে মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, কূফা, বছরা, সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্রের সমাবেশ ঘটতো। উনার ছাত্রের সংখ্যা ছিল অগণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে এবং বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। প্রায় দুইশত রাবী উনার নিকট থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফের সংখ্যা ২,২৮৬ (দুই হাজার দুইশত ছিয়াশি)। তন্মধ্যে মুত্তাফাকুন আলাইহি ১৮০টি (অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উভয়ের ঐকমত্যে বর্ণিত)। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এককভাবে বর্ণনা করেছেন ৮০টি হাদীছ শরীফ। আর ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এককভাবে বর্ণনা করেছেন ৯০টি হাদীছ শরীফ (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
উনার ছেলে ও নাতী উনাদের থেকেও বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে।
ইলমে হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় ফিকাহ শাস্ত্রেও হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবদান ছিল। উনার ইজতিহাদ ও ফতওয়াসমূহ সংকলিত হলে একটি স্বতন্ত্র কিতাবে পরিণত হতো। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দলের সাথে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বছরায় পাঠান। উনার ফিকাহ শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইহা একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত বিবি শা’ওয়ানাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৯)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলিম চর্চায় কতবেশি মনোযোগ!
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শিশু সন্তান জন্ম গ্রহণের ৭ম দিনে সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেনমোহর নিয়ে কিছু কথা.... (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)