ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ০৯ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ফতওয়া বিভাগ
১। পূর্বে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকায় এবং বর্তমানে দৈনিক আল ইহসান শরীফ পত্রিকায় “খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে” বিশুদ্ধ, সঠিক ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মূল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা, যেন প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী টুপি সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার সম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে পারে।
২। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব ধরনের টুপিই পরিধান করেছেন। এ কথা বলা সুস্পষ্ট কুফরী। কারণ তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যারোপ করার শামিল।
৩। সব ধরনের টুপিই সুন্নত নয়, বরং যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অথবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরিধান করেছেন বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, সে টুপিই সুন্নতী টুপি।
৪। যে টুপি সুন্নতী টুপি নয় এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের টুপিও নয়, সে টুপি পরিধান করা জায়িয। তবে তা অবশ্যই সুন্নত মুবারকের খিলাফ।
৫। টুপির নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা ইসলামে নেই, একথা বলার অর্থই হলো- দ্বীন ইসলামকে অপূর্ণ সাব্যস্ত করা, অথচ দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। কাজেই নির্দিষ্ট প্রকারের টুপির বর্ণনা অবশ্যই দ্বীন ইসলামে রয়েছে।
৬। পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক ছিল সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট। যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। মাথা হতে বিন্দুমাত্রও উঁচু হয়ে থাকতো না, আর এটাই মূলতঃ খাছ সুন্নতী টুপি।
৭। যে টুপি বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা বিধর্মীদের জন্য খাছ বা তাদের শেয়ার, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয ও হারাম। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৮। বুরনুস টুপি, যা উপরের দিকে এক হাত পরিমান লম্বা বা উঁচু। এ টুপি খ্রিষ্টান বা বিধর্মীদের খাছ টুপি। বুরনুস টুপি পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
৯। কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি হিন্দুদের খাছ টুপি। হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে কিস্তি টুপি পরিধান করা নাজায়েয।
১০। পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপি বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু তা নতুন উদ্ভুত তাছাড়া খইরুল কুরুনের কেউ পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপি ব্যবহার করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর না পাওয়া যাওয়াটাই স্বাভাবিক, যেহেতু খইরুল কুরুনে পাঁচ কল্লি, জালী ইত্যাদি টুপির কোন অস্তিত্বই ছিলনা।
১১। হযরত আবূ কাব্শা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা গোল টুপির দলীল হিসেবে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কারণ মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণ করার জন্য জঈফ হাদীছ শরীফই যথেষ্ট। যদিও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত নয়, তাছাড়া গোল টুপির ব্যাপারে ছহীহ্ হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে।
১২। ক্বলানসুওয়াতুন (قَلَنْسُوَةٌ) শব্দের ব্যাপক অর্থের উপর ভিত্তি করে সব ধরনের টুপিকে জায়েয বা সুন্নত বলা জেহালত বৈ কিছুই নয়।
১৩। হাফিজুল হাদীছ আল্লামা দিমিয়াত্বী রহমতুল্লাহি ও সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ। কারণ উনারা উভয়েই পবিত্র হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত।
১৪। বুরনুস শব্দের উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা চরম জেহালত বা মুর্খতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ বুরনুস টুপি হচ্ছে- উপরের দিকে এক হাত পরিমান লম্বা বা উঁচু, আর কিস্তি টুপি হচ্ছে- দোপাট্টা ও আড়াআড়ি ভাবে লম্বা। তাছাড়া বুরনুস টুপি পরিধান করাও নাজায়েয।
১৫। ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে যে বুরনুস পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো লম্বা টুপি নামক বুরনুস ও রেশম মিশ্রিত বুরনুস। কারণ লম্বা টুপি খ্রিষ্টানদের খাছ টুপি, আর রেশম পুরুষের জন্য ব্যবহার করা হারাম।
১৬। যে সকল পবিত্র হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ‘বুরনুস’ পরিধান করেছেন বলে উল্লেখ আছে, তা হলো টুপি সংযুক্ত জুব্বা। কারণ টুপি সংযুক্ত জুব্বাকেও বুরনুস বলা হয়।
১৭। বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর, পবিত্র হাদীছ শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও সীরাত গ্রন্থসমূহের প্রায় ১০৩টি দলীল দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাদা, গোল ও চার টুকরো বিশিষ্ট গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি ছিল- সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট। এমন গোল, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, যা কখনো মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমানও উঁচু হয়ে থাকতো না।
কাজেই যারা বলে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব ধরনের টুপি পরিধান করেছেন এবং টুপির সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা শরীয়তে নেই। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, দলীলবিহীন ও শরীয়ত বিরোধী এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীও বটে। এ ধরনের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের তওবা করা ফরয।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবেক আমল করার, ছহীহ সমঝ হাছিল করার, সুন্নত মুতাবেক আমল করার ও হক্ব-মত হক্ব পথে দায়িম-কায়িম থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন। (সমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১)
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯)
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)