কেমন ছিলো স্বর্ণালী যুগের মুসলমানদের নিরাপত্তা বিভাগ
, ০৯ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ৩০ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস

মুসলিম সালতানাতগুলোর বেশিরভাগ অঞ্চলেই নিরাপত্তা প্রধানের উপস্থিতি ছিলো। অঞ্চলভেদে উনাদের ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হতো। আফ্রিকায় নিরাপত্তা প্রধানকে বলা হতো হাকিম। মামলুক সালাতানাতের শাসনামলে বলা হতো ওয়ালি। আর মিশরে এই পদটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। সেখানে নিরাপত্তা প্রধান ছিলেন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। গভর্নরের অনুপস্থিতিতে তিনিই নামাযের ইমামতি করতেন। দান-সদকা ও সালতানাতের অনুদান বিতরণসহ অনেক কাজ তিনিই সম্পাদন করতেন।
মিশরের নিরাপত্তা বিভাগের কার্যালয় ছিল জামে আল আসকার নামক এক মসজিদের পাশেই। মিশরে নিরাপত্তা প্রধানের পদকে বলা হতো শরতহুল আলিয়া। সেখানে এই রীতি প্রচলিত ছিল যে, নিরাপত্তা প্রধান প্রতিনিধিদের থেকে নিত্যদিনের সংবাদপ্রবাহ জানতেন। সালতানাতে কেউ ইন্তেকাল করেছেন কিনা, বড় কোনো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে কিনা সে সম্পর্কে প্রতিনিধিগণ নিরাপত্তা প্রধানকে অবহিত করতেন। এরপর সুন্দরভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিদিন সকালে সুলতানের কাছে পৌছানো হতো আর তিনি অবগত হতেন।
শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা প্রধানগণ সে আমলে কোমরের দিকে বিশেষ এক ধরনের লম্বা তরবারি বহন করতেন। বিশেষ এই তরবারির নাম ছিলো তাবারযিন।
অপরদিকে আল আন্দালুসিয়ার ইসলামী সালতানাতে নিরাপত্তা প্রধানের দুটি পৃথক বিভাগ ছিল। একটি বিভাগকে বলা হতো শরতহুল কুবরা। সুলতানের নিকটস্থ লোক, দরবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, নেককার-পরহেজগার লোক উনাদের আইনি অধিকারের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিলো এই বিভাগের। এই বিভাগের পক্ষ থেকে দরবারের প্রধান ফটকে একটি আসন থাকত। শুধু উযির বা হাজিবদেরই দরবারকক্ষে ঢুকতে দেয়া হতো। কোনো সন্দেহ নেই এ ধরণের পৃথক বিভাগ গঠন প্রমাণ করেন যে, ইসলামী সভ্যতা সবসময় শরীয়ত এবং ন্যায়বিচারকে যথাযথ মর্যাদা দান করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে কে গরীব, কে ধনী, কে শাসক আর কে আম মুসলমান তা পৃথক করে দেখা হয়নি।
আর দ্বিতীয় বিভাগকে বলা হতো শরতহুল ছোগরা। এই বিভাগটি ছিল সাধারণ মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উনাদের মাঝে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দায়িত্বে। আন্দালুসে নিরাপত্তা প্রধানের উপাধি ছিল ছহিবুল মাদিনা।
উল্লেখ্য, সম্মানিত ইসলামী সভ্যতা একটি আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ গঠনমূলক সভ্যতা। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মুসলিম সালতানাগুলোতে যে নিরাপত্তা প্রধানের পদ ছিলো তা অন্যান্য সকল গোষ্ঠীগুলো থেকে আলাদা ও সমৃদ্ধশালী ছিলো। এমনকি অমুসলিমরাও মুসলমানদের এই বিচারব্যবস্থা থেকে কায়দা-কানুন চুরি করে বর্তমানে নিজেদের নামে তা চালিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের প্রবর্তক দাবি করছে। নাউযুবিল্লাহ! মূলত মুসলমানদের নিরাপত্তা বাহিনীতে পরবর্তী সময়ে বিধর্মীরা পুলিশ বাহিনী নামে নামকরণ করে। যা তাদের চৌর্যবৃত্তির সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিশ্বব্যাপী ইহুদী ষড়যন্ত্রের মাস্টার প্ল্যান প্রটোকল অফ ইহুদী
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কি বলে? হিজরী সন বাদ দিতেই কি পহেলা বৈশাখ তথা ফসলী সন চালু করা হয়েছিলো?
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোলকাতা কেন্দ্রীক উচ্চ বর্ণের হিন্দু চাটুকাররা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের উপরে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করে (১)
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত ইলম অন্বেষনকারীদের উপর গায়েবী মদদের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফ্রান্সে দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা এবং একজন সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঈমানী গর্জন
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মামলুক সালতানাতের সময় মাদরাসায় উচ্চতর পড়াশুনার বৈচিত্রতা
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলদিজ প্রাসাদে ইফতার আয়োজনের স্মৃতিকথা
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়সমূহ
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসমানীয় আমলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস যেভাবে পালন করা হতো
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রাচীন বাংলার মুসলমান মুদ্রার ইতিহাস
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জানা আছে কি? আজকের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একসময় মুসলমানদের কর দিয়ে চলতো
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)