কেমন ছিলো মুঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
, ৩০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২১ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২১ মে, ২০২৩ খ্রি:, ০৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস

মুঘল সেনাবাহিনীর এমন কিছু ইউনিট ছিলো যা সালতানাতের বিস্তৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। মুঘল সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী শাখা ছিলো আর্টিলারি বা গোলন্দাজ বাহিনী। মুঘলসেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোতে অগ্রবর্তী বাহিনীর একেবারে প্রথম সারিতেই মোতায়েন করা হতো গোলন্দাজ বাহিনীকে। ছোট-বড় বিভিন্ন কামানের সমষ্টিতে এই বাহিনীটিকে গড়ে তোলা হয়েছিলো। কামানগুলোকে টেনে নেয়ার জন্য সংরক্ষিত হাতি আর ষাঁড়ের বিশাল এক বহর ছিলো।
যুদ্ধক্ষেত্রে ‘আরাবাহ’ নামক কৌশলে আর্টিলারি বাহিনীকে মোতায়েন করা হতো। এই কৌশলে ঘোড়া বা গরুর গাড়িকে দড়ি বা শেকল দিয়ে বেঁধে অগ্রবর্তী বাহিনীর অবস্থানের সামনে রাখা হতো। পরপর দুটি গাড়ির মাঝে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকতো। এই ফাঁকা জায়গাগুলোতে আর্টিলারি বাহিনীর কামানগুলোকে বসানো হতো। আবার ম্যাচলকধারী যোদ্ধারা গাড়িগুলোকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন। দড়ি বা শেকল দিয়ে সংযুক্ত গাড়িগুলো শত্রু বাহিনীর জন্য প্রাথমিক বাঁধা হিসেবে কাজ করতো। তাছাড়া শত্রুরা যেন খুব সহজেই এই বাঁধা পর্যন্ত পৌছাতে না পারে, সেজন্য আর্টিলারি বাহিনীর অবস্থানের সামনে গভীর পরিখা খনন করা থাকতো। কামান ছাড়াও আর্টিলারি বাহিনীতে মর্টার, গ্রেনেড আর রকেট ব্যবহার করা হতো। মর্টার ব্যবহারকারী সৈন্যদের ‘দাগেনদাজ’ বলা হতো। ‘রাদানদাজ’ বলা হতো গ্রেনেড নিক্ষেপকারী সৈন্যদের, আর রকেট নিক্ষেপকারী সৈন্যদের নাম ছিলো ‘তাখশ-আনদাজ’।
শত্রুর উপর প্রাথমিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের সেনাদের অবস্থান ভেঙ্গে দেয়ার জন্য মুঘল আর্টিলারি বাহিনীর জুড়ি ছিলো না। হিন্দুস্তান আক্রমণের সময় মুঘল বাদশাহ বাবর ইব্রাহীম লোদির হস্তীবাহিনীর বিরুদ্ধে এই আর্টিলারি বাহিনীটিকে ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছিলেন। আর তাই হিন্দুস্তান বিজয়ের মুঘল সেনাবাহিনীর এই ইউনিটটির প্রতি বিশেষভাবে যতœ নেয়া হতো। পূর্বে বিভিন্ন অবরোধ যুদ্ধে দুর্গ ভেঙ্গে শত্রুপক্ষকে আত্মসমর্পণ করাতে অনেক সময় লেগে যেতো। কিন্তু এই আর্টিলারি বাহিনীর গোলাগুলো খুব দ্রুতই শত্রুদুর্গের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম ছিলো। ফলে অবরোধ যুদ্ধগুলো খুব দ্রুতই সফলতার মুখ দেখতে পেতো।
মুঘল সেনাবাহিনীর প্রধান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ ছিলো এই বাহিনীর এই অশ্বারোহী ইউনিটটি। যুদ্ধক্ষেত্রে আর্টিলারি বাহিনীর ঠিক পেছনেই অশ্বারোহী
বাহিনীকে মোতায়েন করা হতো। মুঘল সেনাবাহিনীর অশ্বারোহী সৈন্যদের পদবি ছিলো ‘সওয়ার’। তবে এই বাহিনীতে যে শুধুমাত্র ঘোড়াই থাকতো, তা নয়। ঘোড়া ছাড়াও অশ্বারোহী বাহিনীর নিজস্ব উট, হাতি, ঘোড়ার গাড়ি ও গাধা থাকতো। এক হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের কোনো মানসবদারকে সবসময় ৪ শত ঘোড়া, ৩২০টি ঘোড়ার গাড়ি, ২ শত হাতি, ১৬০টি উট এবং ৪০টি গাধা সংরক্ষণ করতে হতো। মুঘল সেনাবাহিনীতে প্রধানত আরবীয় ঘোড়া, তুর্কী ঘোড়া এবং ইরানী ঘোড়া ব্যবহৃত হতো। আর সেনাবাহিনীর উট প্রতিপালনের জন্য বিখ্যাত ছিলো গুজরাট, সিন্ধু, আজমীর, জয়সালমীর আর থানেশ্বর।
আকবরের সময় তার অশ্বারোহী বাহিনীতে সৈন্য ছিলো প্রায় ৪ লাখ, বাদশাহ শাহজাহানের বাহিনীতে অশ্বারোহী সৈন্য ছিলো ২ লাখের কাছাকাছি। আর বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কার বাহিনীতে ছিলো ৫ লাখেরও বেশি অশ্বারোহী সৈন্য। মূলত উনার সময়েই সবচেয়ে বেশি সামরিক উন্নতি হয়েছিলো মুঘলদের।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (১)
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেনিয়া ব্রিটিশ দখলদারিত্ব বিশ্বব্যাপী অগণিত যুদ্ধাপরাধ, জুলুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিধর্মীরা নিজেদের স্বজাতির কারো আঘাতেরও পাল্টা প্রতিশোধ নিতে ভুলে না, কিন্তু মুসলমানরা বিধর্মীদের কাঁটার বদলে ফুল দেয়
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৬)
২২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৫)
২২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৪)
২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৫)
১৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৩)
১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০২)
১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০১)
১৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বিশ্বব্যাপী ইহুদী ষড়যন্ত্রের মাস্টার প্ল্যান প্রটোকল অফ ইহুদী
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)