কেমন ছিলো অতীতের স্বর্ণালী ও সমৃদ্ধশালী মক্তবের শিক্ষাব্যবস্থা
, ১৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৭ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস

ইসলামী সালতানাতগুলোর বিস্তৃতির সাথে সাথে মুসলমানরা বিজিত অঞ্চলগুলোর শিক্ষার দিকে অধিক মনোযোগ দেন। শাম বিজয়ের পর সেখানে অনেক মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুসলমানদের সন্তানরা এসব মক্তবে পড়াশুনা করতেন। পুরো মুসলিম বিশ্বে মক্তব প্রতিষ্ঠার এই ধারা এতোটাই বেগবান হয় যে, বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ও ভূগোলবিদ ইবনে হাউকাল মুসলিম সিসিলির একটি শহরেই তিনশোর বেশি মক্তব দেখেছেন। এসব মক্তবে শিশুরা আরবী ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান ও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ শিক্ষা এবং তিলাওয়াত করতেন। সে সময় কুফার একেকটি মক্তবে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ছিলো। এত বেশি ছাত্র থাকার কারণে মক্তবের ভেতরই ঘোড়ায় চড়ে চক্কর দিতো হতো শিক্ষকদের।
তিউনিসিয়া ও মরক্কোতেও মক্তব গড়ে ওঠে। আবু ইসহাক ইব্রাহিম বিন আহমদ বিন আলী ছিলেন কাইরাওয়ান শহরের বিখ্যাত আলেম। তিনি নিজের গ্রামের মক্তবে শিশুদের পড়াতেন। এসব মক্তবে কখনো কখনো একের অধিক শিক্ষক থাকতেন। সে সময় ইসলামিক সিসিলির মক্তবগুলোতে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক থাকতেন। একজন প্রধান শিক্ষক থাকতেন। তিনি সব দেখভাল করতেন। এ কারণে সিসিলিতে প্রচুর মক্তব শিক্ষক ছিলেন। শুধু পালের্মো শহরেই ৩০০ জন মক্তব শিক্ষক ছিলেন।
সে সময় অভিভাবকরা চাইতেন সন্তানদের প্রসিদ্ধ আলেম উনাদের কাছে সন্তানদের পড়াতে। সাধারণ জনগণ মক্তবের শিক্ষকদের অনেক সম্মান করতো। এমনকি মুসলিম শাসক এবং তার সকল আমীর-উমরাহ অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান করতো শিক্ষকদের।
সাধারণত শিক্ষকরা ছাত্রদের থেকে বিনিময় গ্রহণ করতেন। তবে অনেক শিক্ষকই ছিলেন যারা ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের থেকে হাদিয়া গ্রহণ করে তা দরিদ্র ছাত্রদের হাতে তুলে দিতেন।
ইবনে বতুতার সফরনামাতেও বিভিন্ন অঞ্চলের মক্তবের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনে বতুতা দামেশকের উমাভী মসজিদের মক্তবের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, একদল শিক্ষক পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠদানে ব্যস্ত। উনারা বসেছেন মসজিদের পিলারে হেলান দিয়ে। উনারা কাঠের ফলকে লিখে নয় বরং মুখে উচ্চারণ করে করে পড়ান। এছাড়া আছেন হস্তলিপির শিক্ষক। উনারা বিভিন্ন কবিতার পংক্তি লিখে ছাত্রদের হস্তলিপিতে পারদর্শী করে তোলেন।
বাংলার সুলতানী আমল ও মুঘল আমলেও হাজার হাজার মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাধারণত এসব মক্তবের ব্যয়ভার মুসলিম শাসকই বহন করতেন। তখন প্রতিটি মসজিদে মক্তব ছিলো। বাংলাসহ সমগ্র ভারতে একটা সাধারণ রীতি ছিল চার বছর চার মাস চার দিন বয়সে মুসলিম শিশুদের শিক্ষা শুরু করা হতো। শিশুদের শিক্ষা শুরুর দিন পবিত্র মিলাদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করা হতো। পূর্ব থেকে নির্ধারিত সময়ে শিশু তার শিক্ষকের সামনে বসতো। শিক্ষক একটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করতেন এবং সেই শিশু তা পুনরাবৃত্তি করতো। অনুষ্ঠানের দাওয়াত পত্র লেখা হতো ফার্সিতে। এই অনুষ্ঠানকে বিসমিল্লাহ-খানি বলা হতো।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিশ্বব্যাপী ইহুদী ষড়যন্ত্রের মাস্টার প্ল্যান প্রটোকল অফ ইহুদী
১১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস কি বলে? হিজরী সন বাদ দিতেই কি পহেলা বৈশাখ তথা ফসলী সন চালু করা হয়েছিলো?
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোলকাতা কেন্দ্রীক উচ্চ বর্ণের হিন্দু চাটুকাররা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের উপরে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করে (১)
০৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত ইলম অন্বেষনকারীদের উপর গায়েবী মদদের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফ্রান্সে দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা এবং একজন সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঈমানী গর্জন
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মামলুক সালতানাতের সময় মাদরাসায় উচ্চতর পড়াশুনার বৈচিত্রতা
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলদিজ প্রাসাদে ইফতার আয়োজনের স্মৃতিকথা
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়সমূহ
৩০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসমানীয় আমলে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস যেভাবে পালন করা হতো
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রাচীন বাংলার মুসলমান মুদ্রার ইতিহাস
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জানা আছে কি? আজকের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একসময় মুসলমানদের কর দিয়ে চলতো
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)