কথিত নারী অধিকার ও বাস্তবতা
, ১৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
একজন মহিলার নাম নাদিয়া (ছদ্মনাম)! সে মহিলার চার সন্তান। বড় দুই সন্তানের মধ্যে একজন মেয়ে একজন ছেলে। তারপর যমজ দুই মেয়ে। যমজ দুই মেয়েদের বয়স যখন ৫ বছর থেকে ৬ বছর তখনকার ঘটনাই এখানে উল্লেখ করা হলো-
সেই মহিলার আহাল (স্বামী) আয়-রোজগার করে থাকে। তা সত্ত্বেও সে মহিলা স্কার্ফ বানিয়ে মুহম্মদপুরের একটি মার্কেটে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে আহালও সংসারে আয় আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আহলিয়াকে বাধা দেয়নি। ছেলে মেয়েরাও বাধা দেয়নি। যেহেতু মহিলার দ্বীনী শিক্ষা নেই বা বুঝ নেই; তাই বেপর্দা হয়েই সে তার নির্ধারিত স্কার্ফ বিক্রি করতো। এক পর্যায়ে মার্কেটে যাওয়া-আসার ফলে অনেক পুরুষের সাথে উঠা-বসা থাকা সত্ত্বেও জিয়া নামে এক ব্যক্তির সাথে তার ভালো খাতির হয়ে যায়। সে লোক বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করে। একদা সে মহিলা সে লোকটাকে ভাই বলে সম্বোধন করতে থাকে। আর মহিলার ছেলে-মেয়েরা ‘মামা মামা’ বলে ডাকে। এদিকে বড় মেয়ের বিবাহ ঠিক হয় পরিবার থেকে। কিন্তু দেখা যায়, পাত্র পক্ষ মেয়েকে পছন্দ করা সত্ত্বেও বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর যখন খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারল মেয়ের মা বাইরের একটা লোকের সাথে মেলামেশা এবং ঘরের বাইরে ব্যবসার কাজে ওই লোকটাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। .......এসব কথা জানার পর মেয়েটার বিবাহ ভেঙ্গে যায়। যখন মেয়েটার বিবাহ ভেঙ্গে গেল তখনই টনক নড়ল পুরো পরিবারের; হুঁশ ফিরলো তাদের। ছেলে-মেয়েরা তার মাকে নিষেধ করে দিলো সেই লোকের সাথে আর মেলামেশা না করতে। মহিলার আহালও নিষেধ করে দিল। সেই লোককে আর ঘরে না আনতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পরিস্থিতি হয়ে গেলো ঘোলাটে। সেই মহিলা তার আহাল এবং সন্তানের কথা মেনে নিতে পারলো না। বরং আরো বললো “জিয়াকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তোমরা আমার জিয়াকে এনে দাও। ” জিয়াকে ডাকা হলো এবং মহিলার আহাল সরাসরি জিজ্ঞাসা করলো- “এই মহিলা তো চার সন্তানের মা; এরপরও কি তুমি তাকে নিবা। ” সেই জিয়া নামের লোকটি পরে জানাবে বলে ২ থেকে ৩ দিন পর জানালো যে, সে মহিলাকে ঘরে তুলে নিবে। এবং পরে মহিলা ও আহালকে সন্তান রেখে ওই লোককে বিবাহ করলো। সাথে করে ২ যমজ মেয়েকে নিয়ে গেলো। কিন্তু কিছুদিন পর ৫-৬ বছরের ২ যমজ বোন তার মার কাছে না থেকে বড় ভাই বোন এবং বাবার কাছে ফিরে আসল। ...... ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে ৬ বছর।
সেই জিয়া নামক লোকটি সেই মহিলাটিকে এক সময় ছেড়ে দিয়েছে; মহিলা এখন পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। যে বাড়িতে তার পূর্বের আহাল-সন্তান থাকে; সেই বাড়ির নিচে গেটের কাছে এসে বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে আবার ফিরে যায়। দুই যমজ মেয়ের বয়স এখন বারো বছর। মাকে দেখামাত্রই তারা দৌড়ে ঘরে চলে যায়। কাছে যায় না। বড় ছেলে এবং মেয়েটা এখন চাকরি করে। মাকে দেখলে ঘৃণায়, কষ্টে-দুঃখে তারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হাঁটা দেয়। এই ছেলে-মেয়েদের বাবা এই কঠিন পরিস্থিতি দেখে বলেছে- “তোমরা তোমাদের মাকে ফিরিয়ে আনো। মা হিসেবে না হোক; তোমাদের বাসায় তো সব কাজ করতে; তোমাদের দেখাশুনা করতে একটা বুয়া লাগে। তোমরা সেই বুয়া হিসেবে তোমার মাকে রাখো। ” কিন্তু সন্তানরা তাদের মাকে ঘরে আনতে নারাজ। তাদের মা এখন ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায়; কোন আশ্রয় তার এখন নেই। ........... বড়ই কঠিন পরিস্থিতি।
এর থেকেই আমাদের ইবরত-নছীহত গ্রহণ করা উচিত ‘বেপর্দার কুফল’ সম্পর্কে। আজ এই মহিলার যদি শরীয়ত উনার জ্ঞান থাকতো। পর্দা করতো; তাহলে এমনভাবে সে শয়তানী কাজে মোহগ্রস্ত হতো না এবং আহালেরও যদি দ্বীনি ইলিম থাকতো তাহলে আহলিয়া, কন্যা সবাইকে পর্দা করাতো এবং বাইরে বাইরে বেগানা পুরুষের সাথে আহলিয়াকে ঘুরা ফেরা করতে দিতে পারতো না। সুতরাং এদের পুরা পরিবারের শিক্ষার দিক থেকে অভাব হচ্ছে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন না করা। এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখবো, হাক্বীক্বী পর্দা না করার কারণে, অধীনস্থদের পর্দা না করানোর কারণে ওই মহিলার মতো হাজারো মহিলার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, ফিৎনা ফ্যাসাদ হচ্ছে, নারী টিজিং হচ্ছে, সম্ভ্রমহরণ হচ্ছে, তালাক হচ্ছে।
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক হচ্ছে, মহিলারা হাক্বীক্বী পর্দা করবে। প্রয়োজনে বের হবার সময়ও আপাদমস্তক ঢেকে, পর্দা করে অর্থাৎ বোরকা পরে বের হবে। তা না হলে হাদীছ শরীফ মুতাবিক ‘শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকবে। ’ অর্থাৎ কিভাবে তার দ্বারা পাপ কাজ করানো যায়; সেই চেষ্টাই শয়তান করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি আগেই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ উনার আয়াত শরীফ ৬২ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “সে (শয়তান) তোমাদের বহু সংখ্যক লোককে বিপদগামী করেছে। তোমাদের কি আক্বল হয়নি? অর্থাৎ তোমরা কি নির্বোধ। ”
অতএব এই শয়তানের মোহ থেকে বাঁচতে হলে। শরীয়ত উনার হুকুম-আহকাম মানতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনাদের আদেশ-নিষেধ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এবং যেসব আদেশ নিষেধ রয়েছে তা সম্পর্কে, জানতে হবে। আর এই নিয়ামত উনার পূর্ণ বিষয়গুলো জানার জন্য যেতে হবে উনাদেরই কাছে যাঁদের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- “তোমরা যারা জানো না, আহলে যিকির তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী যারা রয়েছেন উনাদের কাছে যাও। ”
সুতরাং পবিত্র আয়াত শরীফ মুতাবিক আমাদের হাক্বীক্বী পর্দা বুঝতে হলে, পর্দা করতে হলে, বেপর্দা থেকে বাঁচতে হলে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে হলে, দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম-আহকাম উনাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হলে অবশ্যই উক্ত ইলিম শিক্ষার জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে আসতে হবে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম এবং উনারই সম্মানিতা আহলিয়া আহলু বাইতে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের নেক ছোহবতে। তাহলেই দ্বীন ইসলাম উনার ইলিম অর্জন করে হাক্বীক্বী মুসলিম-মুসলিমা হওয়া সম্ভবপর হবে। আমীন।
-আহমদ আজিমা ফারহা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিভাবে প্রথম মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেন?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)