উন্নয়নের জোয়ারের প্রচারনার বিপরীতে অল্প বয়সী বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, তালাক্বপ্রাপ্তা লাখো-কোটি মহিলা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
দেশের অসহায় মহিলাদের প্রতি সরকারের বিশেষ হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরী।
, ২৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১২ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সম্পাদকীয়
বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, স্বামীর বহুবিবাহের কারণে ভরণপোষণের সমস্যা, দীর্ঘদিন পৃথক বসবাস, তালাকপ্রাপ্তা ও স্বামী থাকা সত্ত্বেও কোনো না কোনো কারণে ভরণপোষণ করতে না পারা মহিলার সংখ্যা লাখ থেকে কোটি হলেও তাদের সঠিক পরিসংখ্যান রাষ্ট্রীয়ভাবে অদ্যাবধি তৈরি হয়নি।
বয়স কাঠামোর ক্ষেত্রে এখানে রয়েছে মিশ্রতা। কারো বয়স সবেমাত্র পঁচিশের কোটা অতিক্রম করেছে। আবার কেউবা পঞ্চাশোর্ধ্ব কিংবা তদূর্ধ্ব। বয়সের ভারে কেউ কেউ ন্যুব্জ। আক্ষরিক অর্থে যাকে আমরা পরিবার বলি, সেটি তাদের বেশিরভাগের মধ্যে নেই। সমাজের নিম্ন অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থাকা এ মানুষগুলোর প্রতিদিনকার জীবন কাটে অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের মধ্যে যাদের বয়স তুলনামূলক কম, তাদের বিভিন্ন হয়রানিরও শিকার হতে হয়। একজন বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা মহিলার ভরণপোষণই যেখানে প্রধান সমস্যা, সেখানে আর দশটি সাধারণ মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবনের অন্যান্য উপকরণের কথা ভাবা অবাস্তব।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই মহিলা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে প্রায় আশিজন গ্রামে বাস করে। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেকজনই হচ্ছে মহিলা। গ্রামের অধিকাংশ মহিলারা আজো অবহেলিত, অধিকারবঞ্চিত।
গ্রামের এই বিশাল মহিলা গোষ্ঠীর প্রায় ৭০ ভাগই অশিক্ষিত। আর কিছু মেয়ে মাত্র প্রাইমারি শেষ করে বেছে নিয়েছে সাংসারিক জীবন। অল্প শিক্ষিত এসব মহিলার দরিদ্র যেন পিছু ছাড়ছে না। একমুঠো খাবারের জন্য, একটু মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য তাদের প্রতিটি মুহূর্তে সংগ্রাম করে যেতে হয় নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে।
বিধবা, পরিত্যক্তা ও তালাকপ্রাপ্তা তাদের প্রতি বঞ্চনা হয় আরো বেশি। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তো বটেই, অন্য মহিলাদের থেকেও তারা পিছিয়ে, পারিবারিক কাঠামোতেও তারা অবহেলিত। সমাজে মানুষ হিসেবে যতটুকু মর্যাদা থাকার কথা, তা তাদের নেই। স্বামী বর্তমান না থাকার কারণে সন্তানের পরিচয় দেয়া ও সন্তানদের বিয়ে দেয়ার সময় পিতার পরিচয় ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজে অনেক সময়ই বলা হয়, যার মা স্বামীর ভাত খেতে পারেনি, তার মেয়েও স্বামীর সংসার করতে পারে না। এটা মূলত সামাজিক কুসংস্কার। সমাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত ইসলামী শিক্ষা চালু না থাকায় এই কুসংস্কার বিরাজ করছে। ইসলামবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই সমৃদ্ধ, সুস্থ ও সুষ্ঠু সমাজ গঠন করতে পারে না।
তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদেরকে অনেকেই আবার খারাপ মেয়ে বলেও আখ্যা দেয়। তাই বিচ্ছিন্ন ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা খুবই প্রকট। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মহিলাদের জন্য এই সমস্যার তীব্রতা আরো বেশি। সমাজে মহিলাদেরকে সহায়তা করার লোক খুবই সীমিত। অসহায় মহিলাদেরকে লালন-পালন করার দায়িত্ব সমাজের তথা রাষ্ট্রের তথা সরকারের। কিন্তু সমাজ ও সরকার তার দায়িত্ব পালন না করে বরং অসহায় মহিলাদেরকে উপার্জনক্ষম হতে বলে। অথচ মহিলাদের উপর্জনের ক্ষেত্রও সীমিত করে রেখেছে রাষ্ট্রযন্ত্র। তাই অসহায় দরিদ্র মহিলাদেরকে এই সমাজ বাস্তবতা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে থেকেই উপার্জনের চিন্তা করতে হয়, সংসার চালানোর সব দায়িত্ব নিতে হয়। নিম্ন মজুরির কাজের সামান্য কিছু সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক কাজ যেমন তারা পায় না, অবার যে কাজগুলো জানে বা যে কাজে দক্ষ সে অনুসারে অর্থ উপার্জনমূলক কাজের সুযোগও প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নেই। অন্যদিকে নিজেদের এমন কোনো সম্পদ নেই- যেগুলো কাজে লাগিয়ে তারা ভালোভাবে উপার্জন করতে পারে। নিজেদের থাকার মতো জায়গা-জমিও নেই অনেকের। অধিকাংশ বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলাই বাবার বাড়িতে থাকে। এদিকে পিতার সম্পত্তিতে তাদের অধিকার থাকলেও তাদের সে অধিকার তারা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম তাদেরকে অধিকার দিলেও রাষ্ট্র সে অধিকার আদায় করে দেয় না, বুঝিয়ে দেয় না।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলারা বিশেষভাবে পিতার সম্পত্তির ন্যায্য উত্তরাধিকার পায় না। বোন জানে যে, তার ভাই নামমাত্র সম্পত্তি তাকে দিচ্ছে। কিন্তু ভাই-বোনের আন্তরিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে মনে করে কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কোনো বিপদে পড়লে ভাই তাকে আশ্রয় দেবে- এই আশার স্বাভাবিক সম্পর্ক বোনটি রক্ষা করতে চায়। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম তা বলে না। যার যার হক্ব বুঝিয়ে দিতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র সে নির্দেশ পালন করে না বিধায় মহিলারা তাদের প্রাপ্ত হক্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ৪৮.২৪% মুসলিম বিধবা মহিলা শরিয়াহ আইন সম্পর্কে জানে। যেখানে স্বামী এবং পিতার সম্পত্তিতে মহিলার অধিকার সম্পর্কে বলা আছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, খুব নগণ্য সংখ্যক মহিলা সম্পত্তিতে তাদের অধিকার দাবি করতে পেরেছে। আর বিধবাদের ক্ষেত্রে আরো কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রে দাবি উঠানোই অসম্ভব। বিশেষতঃ যাদের কোনো সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দানে সক্ষম পুুরুষ নেই, সে দুঃস্থ মহিলারা তথা বিধবারা একই সঙ্গে দুঃখী এবং হতাশাগ্রস্ত। স্বভাবতই তারা ন্যায্য প্রাপ্য জমি ও সম্পত্তি টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে পরাজিত হয়। কেননা প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থাও তাদেরকে উপেক্ষা করে।
একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের মর্যাদা প্রয়োজন তাও তাদেরকে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে হারাতে হয় এবং রাষ্ট্রীয় কোনো প্রচেষ্টা তাদের জন্য পরিলক্ষিত হয় না। পরিবার এবং সমাজে তাদের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে কারণে তারা নিজেরাও নিজেদের গুরুত্বহীন বলে মনে করে। প্রচলিত সমাজ/রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদের অবস্থা চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হচ্ছে না। ইসলামহীন সমাজ/রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঐতিহ্যগতভাবেই তাদেরকে নিয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়ে আছে। যার কারণে তারা আরো বেশি অসম অবস্থানে রয়ে যাচ্ছে। এই দুস্থ মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আর্থিক, সামাজিক এবং মানসিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের এক্ষেত্রে যুগপৎভাবে এগিয়ে আসা ফরয।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঝলসে যাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে জনসাধারণ। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের রকমফের চটকদার কথার পরিবর্তে এক্ষনি মূল্যস্ফীতিকে সংকুচিত করে দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে ইনশাআল্লাহ।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের দেশে কয়লার ঘাটতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ কেন? বিগত মাফিয়া সরকারের পথ থেকে সরে এসে কয়লা উত্তোলন শুরু করুন।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গঃ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও অপব্যবহার।
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড়, তাপ মুক্তি নিরাপদ ফল-সবজি প্রাপ্তি, পরিবেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক একটুকরো বাগান
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৪০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বন্ধ হয়েছে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে ইনশাআল্লাহ ঘুরে দাঁড়াবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুদি দোকান, স্টেশনারি দোকান, শপিং মল, পার্লার, সুপার শপ সবখানেই ভেজাল কসমেটিক্স। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবহারকারীরা। সরকারের কঠোর নজরদারী ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দেশের ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় হয় প্রায় ৯০ কেজি। বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২৮শে রবীউছ ছানী শরীফ! সাইয়্যিদাতুনা উম্মুর রদ্বাআহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ, আখু রসূলিল্লাহ মিনার রদ্বাআহ সাইয়্যিদুনা হযরত মাসরূহ্ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। সুবহানাল্লাহ!
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিক্ষা খাতে পতিত সরকারের বাজেটে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে- শিক্ষা উপকরণের দাম কমিয়ে বর্তমান সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে ইনশাআল্লাহ
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শব্দ দূষণ এখন শব্দ সন্ত্রাস ও নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। নারিকেল দ্বীপ নয় শব্দ দূষণে বিপর্যস্থ ঢাকাকে উপযোগী করার জন্য ঢাকার জনযট সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন’ ৩৯ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬ গুণ উৎপাদন বাড়ছে মাছের, তবুও নাগালে নেই দাম
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরকালের কথা স্বরণ করে মুসলিম উম্মাহকে বিধর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)