পাঠক কলাম:
ইতিহাস কথা বলে- ‘বোরকা’ বাঙালি মুসলমানদের আদি সংস্কৃতি
, ২৭ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ সাদিস , ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
আমাদের দেশে একদল কথিত সুশীল রয়েছে, যারা সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বোরকার বিরুদ্ধে বলে থাকে। যদিও বাস্তবতা হলো, আজ থেকে কয়েক দশক আগেও বাঙালি মুসলমান উনাদের সামাজিক জীবনে পর্দা ও বোরকার কোন বিকল্প ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালী ভিসি ছিলেন এ এফ রহমান, তার পরে ভিসি হয়েছিল রমেশ মজুমদার (আর সি মজুমদার)। রমেশ মজুমদার তার আত্মজীবনী ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’তে ভাইস চ্যান্সেলর এ এফ রহমান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে-
“নিয়ম অনুসারে গভর্নরের বাড়িতে কোনো ভোজের নিমন্ত্রণ থাকলে গভর্নরের ঠিক ডানদিকের আসনে ভাইস-চ্যান্সেলারের আহলিয়া বা স্ত্রীর বসার কথা। প্রথম দু’জন ইংরেজ ভাইস-চ্যান্সেলারের আমলে এই নিয়মই চলছিল। তারপরের ভাইস-চ্যান্সেলার রহমান সাহেবের আহলিয়া বা স্ত্রী পর্দানশীন ছিলেন; গভর্নরের ভোজসভায় উপস্থিত থাকতেন না। ” (সূত্র: জীবনের স্মৃতিদীপে, রমেশ মজুমদার, পৃষ্ঠা ৯৬)
এ এফ রহমান যেই সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তা ছিল অগ্রসর মুসলমান সমাজ। কিন্তু যাদের টাকা-পয়সা কম ছিল, তারাও পর্দার ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতো না। যেমন ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে মুসলমান মাঝিদের বর্ণনা দিতে গিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছে-
“জহর, আমিনুদ্দি এবং আরও দুজন মুসলমান মাঝি অত্যন্ত গম্ভীরমুখে এদিকে বসিয়া আছে। ধরিতে গেলে এরাই কেতুপুরের মুসলমান মাঝির সমাজ, আরও দু-চারজন যারা আছে তারা একান্ত নগণ্য। এদের সংখ্যা পাঁচ-ছয় ঘরের বেশী হইবে না। জেলেপাড়ার পূর্বদিকে এদের একত্র সন্নিবেশিত বাড়িগুলিকে বেড়ার বাহুল্য দেখিয়া সহজেই চিনিতে পারা যায়। মেয়েদের বাহিরে না আসিলে চলে না। নদীতে পানি আনিতে যাইতে হয়, পুরুষেরা কেহ বাড়িতে না থাকিলে দোকানে সওদা আনিতে যাইতে হয়। বাড়ির আনাচে-কানাচে কদু-কুমড়া ফলিলে, মুর্গীতে ডিম পাড়িলে, গ্রামে গিয়া বেচিয়া আসিতে হয়। বেড়াগুলি পর্দা রাখে শুধু অন্দরের আর এমন বৌ-ঝি যদি বাড়িতে কেহ থাকে, যাহার বয়স খুব কাঁচাÑতাহার। ”
উপরোক্ত ইতিহাসগুলো ব্রিটিশ আমলে বাঙালি মুসলমানদের পর্দারক্ষার ইতিহাস। তারও আগে মুসলিম শাসনামলে প্রশাসনিক ভাষা ছিল ফারসী, শিক্ষাদান করা হতো আরবী ও ফারসী ভাষায়। তখন বাঙালি মুসলমান কতোটা পর্দানশীন ও দ্বীনদার ছিল, তা বর্তমান যুগের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।
সুতরাং বাঙালী মুসলমানের গোটা ইতিহাস থেকে কেউ দেখাতে পারবে না যে, এই জাতি অতীতে কখনো বেপর্দা ছিল। সুতরাং বোরকাই বাঙালী মুসলমানের আদি সংস্কৃতি, বোরকাই বাঙালী মুসলমানের আদি ঐতিহ্য।
-গোলাম মুর্শিদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইতিহাস কথা বলে: নারী নির্যাতনের সাথে বিধর্মীদের সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আপনি চান, আপনার সন্তান সুশ্রী এবং সুন্দর হয়ে জন্মগ্রহণ করুক?
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে ব্যক্তিত্ব বা আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘শরয়ী পর্দা’ মেয়েদের অন্তরের পবিত্রতার সাথে সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি মুবারক
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৮)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ভুমিষ্ট শিশু সন্তানের কানে আযান-ইক্বামত দেয়া সুন্নত
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলা ও পুরুষদের চোখের দৃষ্টির পর্দা সম্পর্কে জানার কিছু বিষয় (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কারও ঘরে প্রবেশের শরয়ী তথা সুন্নতী তারতীব
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের নারীরা অগ্রগামী হচ্ছেন কিভাবে?
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)