আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন
, ০২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২২ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
قُل لَّا اَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبٰى
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, তোমাদের পক্ষে বিনিময় দেয়াও সম্ভব নয় এবং এর চিন্তা-ফিকির করাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তবে উম্মতকে যেহেতু নাজাত লাভ করতে হবে সেজন্য তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, তারা যেন হযরত আহলু বাইত শরীফ ও আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করে। ” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَةْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضَىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوْا اللهَ لِـمَا يَعْذُوْكُمْ مِنْ نّعِمَةٍ وَاَحِبُّوْنِـىْ لِـحُبّ اللهِ وَاَحِبُّوْا اَهْلَ بَيْتِىْ لِـحُبّـى.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা মুহব্বত করো; কেননা তিনি খাওয়া-পরা ইত্যাদির মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে তোমরা মুহব্বত করো, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক হাছিলের জন্যেই। আর আমার পবিত্রতম আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তোমরা মুহব্বত করো আমার পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক হাছিলের জন্যেই। ” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা কায়িনাতের সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য তিন- তিনটি ফরযিয়াত সাব্যস্ত হয়েছে। তা হচ্ছে-
(১) মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত মুবারক করা।
(২) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত মুবারক করা।
(৩) পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা। এই তিনটি মুবারক বিষয় পারস্পারিক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, উনাদের যে কোন একটি বরকতময় বিষয় ব্যতিরেকে- কোন মুসলমান তার ঈমান ও অস্তিত্বকে কল্পনা করতে পারে না। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেই মুহব্বত মুবারক করা। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত হাছিল করা ব্যতীত কস্মিনকালেও মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক হাছিল করা কোনক্রমে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের- পবিত্রতম রূহানী, জিসমানী এমনকি সার্বিক দিক থেকে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ও নিছবত মুবারকে আবদ্ধ থাকার কারণেই হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে পূত-পবিত্র থেকে পূত-পবিত্রতম করেই এবং সমস্ত মুহব্বত, মা’রিফাত, রেযামন্দি, সন্তুষ্টি মুবারক দিয়েই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলত সকল কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফাত, রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার কোশেশ করা। লক্ষ-কোটি বছর রিয়াযত-মাশাক্কাত করে যে নিয়ামত হাছিল করা সম্ভব নয়, তা মূলত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এক মুহূর্তের তরে ছোহবত মুবারক ও খিদমত মুবারক করে তার চেয়ে কোটি-কোটি গুণে বেশি নিয়ামত মুবারক হাছিল করা সহজ ও সম্ভব। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান কত যে বেশী তা জীন-ইনসানসহ সকল কায়িনাতের জন্য চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অকৃত্রিম ও অবিচ্ছেদ্য চিরস্থায়ী মুহব্বতের- ‘চিরবন্ধনে চিরআবদ্ধ’ থাকার কারণেই উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত ও বুযুর্গী মুবারকও সমগ্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সমভাবে বিদ্যমান। সুবহানাল্লাহ!
কেননা উনারা সুখে-দুঃখে সমআনন্দে, সমবেদনায়, মুবারক খিদমতে সাহায্য-সহযোগিতায় এবং পবিত্রতম সহমর্মিতায়- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্রতম অন্তর মুবারক উনার গভীরতম এক কোনে পবিত্রতম স্থান করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তা থেকে কস্মিনকালেও জুদায়ী নন। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান ও বিশালতা কেউই পরিমাপ করতে পারেনি এবং কস্মিনকালেও পারবে না।
কাজেই যেখানেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানেই হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে একাকার হয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!
অতএব সহজেই অনুমেয় যে, যে কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম-তাকরীম, শান-মান, আলোচনা ও পবিত্রতম মুহব্বত মুবারক করা ফরযে আইন। ঠিক একই কারণে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের তথা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, ‘আবনাউ’ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ‘বানাতু’ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করাও ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!
যাদের অন্তরে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক নেই- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে তারা দুরাচার, পাপাচার, বদকার, মুনাফিক, কাফির, মুরতাদ, বেঈমান। তাদের সাথে কোন মুসলমান আত্মীয়তা রাখতে পারে না, কোন সম্পর্ক রাখতে পারে না, কোন বৈবাহিক সম্পর্ক করতে পারবে না। যে বা যারা তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক পাবে না, পবিত্র হাউযে কাউছার উনার পানি মুবারকও পাবে না। (“আন্ নি’মাতুল উযমা আলাল আলাম আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া আওলাদুহূ” -কিতাব থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ্ আলাইহিস সালাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৮)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৭)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (২০)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৭)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘উম্মী’ শব্দ নিয়ে বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারের চূড়ান্ত জবাব (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৯)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি’ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও তাফসীর মুবারক এবং এ বিষয়ে বদ আক্বীদাহধারীদের কুফরীমূলক বক্তব্যের দলীলভিত্তিক খন্ডনমূলক জবাব (৬)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ (১৮)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ১২ খলীফা আলাইহিমুস সালাম (২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)