আহলিয়ার প্রতি একজন আহালের হক্ব
, ২৯শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْـمَعْرُوْفِ
অর্থাৎ আর তোমরা তোমাদের আহলিয়া সাথে উত্তম ব্যবহার করো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهٖ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِيْ
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার আহলিয়ার (স্ত্রীর) নিকট উত্তম এবং আমি আমার আযওয়াজে মুতহহারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট উত্তম। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
ما اكرم النساء الا كريم وما اهانها لئيم
অর্থাৎ ভদ্র ব্যক্তিরাই শুধু আহলিয়াদের (স্ত্রীদের) সম্মান করে থাকে আর তাদের অপমান অপদস্থ করে অভদ্ররা। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
أَلا َوَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٌ عِنْدَكُمْ
অর্থাৎ সাবধান! আমি তোমাদেরকে আহলিয়াদের (স্ত্রীদের) সাথে ভালো ব্যবহার করা উপদেশ দিচ্ছি। কারণ তারা তোমাদের সাহায্যকারিণী। (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে আহলিয়ার (স্ত্রীর) প্রতি উত্তম ব্যবহার হিসেবে আমরা উল্লেখ করতে পারি। আহলিয়ার শারীরিক-মানসিক কামনা বাসনা পূর্ণ করা, তাকে কটু বাক্য না বলা, গালি-গালাজ না করা, অপমান বা হেয় প্রতিপন্ন না করা, তাকে অনর্থক মার ধর না করা, তবে আত্মীয় স্বজনের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখা, ফিতনার ভয় না থাকলে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যেতে দেয়া, আহলিয়াকে সাধ্যাতীত কাজের চাপ না দেয়া, যৌতুক না নেয়া বা যৌতুকের জন্য পীড়াপীড়ি না করা, কোন ব্যাপারে আহলিয়া অথবা আহলিয়ার পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত হাদিয়ার ব্যাপারে কোনরূপ খোঁটা না দেয়া, তার সাথে উত্তমভাবে কথা বলা ও সৌজন্যমূলক ভালো ব্যবহার করা, যৌক্তিক পর্যায়ে তার পছন্দকে পছন্দ করা, তার অপছন্দকে অপছন্দ করা, তার সুখে সুখী হওয়া, তার দুঃখে দুঃখী হওয়া, আহলিয়ার প্রতি মুহব্বত করা এবং যতœবান হওয়া তার ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অকারণে নিজ আহলিয়ার সামনে অন্য নারীর প্রশংসা না করা, বা তার ছূরত নিজের আহলিয়ার চেয়ে বেশি ভালো ও পছন্দনীয় এমনটি প্রকাশ না করা, বেগানা নারীর প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে নিজ আহলিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।
তাকেই বিশ্বস্ত বন্ধু ও সাহায্যকারী মনে করা। অবৈধ পথে তার কাছ থেকে ফায়দা গ্রহণ না করা, হালাল অর্থে তার দেখভাল করা, আহলিয়ার স্মরণীয় দিনগুলো পালন করা ও সেই উপলক্ষে তাকে হাদিয়া পেশ করা, পবিত্র মীলাদ শরীফ ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করে তার জন্য দোয়া মোনাজাত করা, না চাইতে তার প্রয়োজন পূরণ করা, তার আগমনে এগিয়ে যাওয়া, তাকে সালাম প্রদান করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা। আবার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে আহলিয়া বাহিরে গেলে তাকে বিদায় প্রদান করা, আহলিয়ার পর্দার পূর্ণ ব্যবস্থা করা, তাকে জান্নাতি মেহমান হিসেবে গড়ে তোলা, তার কাজে-কর্মে সাহায্য করা, তাকে সম্মান-ইজ্জত করা তার বহুমাত্রিক প্রশংসা করা, নিজের উপর আহলিয়ার প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগ করে দেয়া, এবং তার উপকারী মতামতগুলো গ্রহণ করা, তাকে ছোট না করে বড় করে তোলা, তার মন জয় করা, এমন কিছু করা যাবে না যাতে আহলিয়া ও তার পরিবার লজ্জিত হয় এবং তাদের মানহাণী হয়। আহলিয়ার ভালোতে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করা এবং জনসম্মুখে তার প্রশংসা ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু তার মন্দতে তাকে ঘরোয়া তা’লীম দিতে হবে। তাকে নিয়ে বৈধ হাসি খুশি করে তাকে সর্বদা উৎফুল্ল রাখা।
শরীয়তসম্মত আহালিয়ার অন্যান্য হক আদায়ের পাশাপাশি জাগতিক সকল ইচ্ছা ও আবদার পূরণের সাধ্যমতো চেষ্টা করা। এছাড়া নিজ থেকে আহলিয়া মৌলিক অধিকার পূরণের পাশাপাশি তার কল্যাণে ও মনোরঞ্জিত অতিরিক্ত কিছু করা। আহলিয়ার সাথে এমন এক শক্তিশালী বন্ধুত্ব তৈরি করতে হবে যা কখনো টুটবার বা ছিন্ন হবার নয়, যে কারণে আহলিয়া সবসময় মনে করবে যে আহালই (স্বামী) হলো তবে জীবনে সবচেয়ে বড় অবলম্বন। আলিয়াকে অহেতুক আটকানোর উদ্দেশ্যে পথে পথে ছোটখাটো ভুলগুলি না ধরে বড় বা গুরুতর ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা ও তাকে সংশোধন করা। আহাল বা স্বামী আহলিয়া বা স্ত্রী উভয়ের মাঝে অনাকাঙ্খিত কিছু হলে পারতপক্ষে নিজেরাই তার সমাধান করে নেয়া। অন্যথায় শরীয়ত সম্মত ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যা হোক, আহালিয়াকে অনর্থক কষ্ট দেয়া যাবে না। এভাবে আহলিয়ার সাথে উত্তম ব্যবহার অব্যাহত রেখে এমনভাবে তার মন জয় করতে হবে যে, সে যেন আপসে আপ তার আহালকে (স্বামীকে) উত্তম বলে হৃদয়ে ঠাঁই দেয়। তাহলে সে সকলের মধ্যে উত্তম বলে বিবেচিত হবে। মোটকথা হল সম্মানিত শরীয়ত সম্মতভাবে যে ব্যক্তি আহলিয়া বা স্ত্রীর কাছে উত্তম সে ব্যক্তি মুসলিম সমাজের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি বলে বিবেচিত হবে। কাজেই আহাল বা (স্বামীকে) উত্তমতার মর্যাদা অভিযুক্ত হতে প্রথমে স্ত্রী বা আহলিয়ার নিকট উত্তম হতে হবে। আমিন।
-রুকসানা আহামদ রিক্তা, রাজশাহী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঝগড়া-বিবাদের কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দুইজন সম্মানিত খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনারা মনোনীত হয়েছিলেন
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শোকরগোযারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোযার না করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শিরক কি? শিরক সম্পর্কে আলোচনা
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
“মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না”
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)