১০০ টি চমৎকার ঘটনা
আশুরা শরীফকে সম্মান করার প্রতিদান
ঘটনা-৮১
, ০২ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
তখন ছিল কাজীদের (বিচারক) যুগ। সেই আলিম যে এলাকায় থাকতেন সেখানকার কাজী সাহেব অনেক ধনী ব্যক্তি ছিল। তাই আলিম ব্যক্তি মনঃস্থির করলেন যে কাজী সাহেবের কাছেই এ বিষয়ে সাহায্য চাইবেন। সে অনুযায়ী আলিম ব্যক্তি কাজী সাহেবের কাছে গিয়ে আশুরা শরীফের ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে দশ সের আটা, দশ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেবে। কাজী সাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় বললো, আছরের ওয়াক্তে আসতে। তারপরে আছরের সময় মাগরিবে, মাগরিবের সময় ইশায় আসতে বললো এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরীব আলিম ব্যক্তি বললেন, ‘হে কাজী সাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না, সেটা আগেই বলতে পারতেন। আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে না করছেন?’ কাজী সাহেব সেই গরীব, আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মনের দুঃখে আলিম লোকটির কান্না এসে গেলো। তখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ি। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন বারান্দায় বসে বাতাস খাচ্ছিল। খেয়াল করলো তার বাড়ির সামনে দিয়ে একজন বয়স্ক ব্যক্তি চোখ মুছতে মুছতে হেঁটে যাচ্ছে। এটা দেখে খ্রিস্টান ব্যক্তি আলিম সাহেবকে ডাক দিলো। জিজ্ঞেস করলো যে আপনার কি হয়েছে? আপনি কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যাচ্ছেন বা কোথা হতে আসছেন? যদি আপত্তি না থাকে আমাকে বলবেন কি? বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টান ব্যক্তিকে প্রথমে সেই আলিম কিছু বলতে চাইলেন না। কিন্তু খ্রিস্টানের একান্ত আগ্রহের কারণে তিনি আশুরা শরীফের ফযীলত ও তার বর্তমান দুরবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। সে ব্যক্তি যদিও বংশগতভাবে খ্রিস্টান ছিল কিন্তু দ্বীন ইসলামের উপরে বেশ অনুরক্ত ছিল। তাই সে উৎসাহী হয়ে আলিম ব্যক্তিকে তার চাহিদা মুতাবিক সবকিছু হাদিয়া করতে চাইলো। কিন্তু সে বিধর্মী বিধায় আলিম ব্যক্তি তার কাছ থেকে কিছু নিতে চাইলেন না। এক পর্যায়ে খ্রিস্টান বললো যে, আপনি হাদিয়া হিসেবে না নেন কমপক্ষে কর্জে হাসানা হিসেবে নিয়ে হলেও আপনার প্রয়োজন মিটান। আলিম ব্যক্তি দেখলেন যে এছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় নেই, তাই তিনি উক্ত দিরহাম ও খাদ্যদ্রব্য নিতে সম্মত হলেন। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি খুব খুশির সাথে আলিম ব্যক্তিকে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরও বিশ দিরহাম দিলো এবং বললো, ‘আপনাকে আমি আশুরা শরীফের সম্মানার্থে এসকল জিনিসগুলো হাদিয়া দিলাম। আপনি দয়া করে আশুরা শরীফের সম্মানার্থে এগুলো গ্রহণ করুন। আর আমি নিয়ত করেছি আশুরা শরীফের সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া আমি আপনাকে দিব। আপনি দয়া করে না করবেন না।’ আলিম ব্যক্তি খুশি হয়ে হাদিয়া নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর পরিবারসহ দোয়া করলেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো; আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন, তাকে পবিত্র ঈমান দান করুন।’
এদিকে ঐ রাতে কাজী সাহেব স্বপ্ন দেখলো যে, তাকে বলা হচ্ছে, ‘হে কাজী সাহেব! তুমি মাথা উত্তোলন করো।’ মাথা তুলে কাজী সাহেব দেখতে পেলো যে, তার সামনে দু’টি বেহেশতের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী সাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এগুলো কার জন্য?’ গায়েবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দু’টি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরীব আলিম লোকটি আশুরা শরীফ উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিল, তাকে তুমি সাহায্য করোনি। কিন্তু তোমার প্রতিবেশি খ্রিস্টান ব্যক্তি সাহায্য করেছে। এজন্য এ বালাখানা দু’টি এখন সেই খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ!
অস্থিরতার সাথে কাজী সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে ঘুম থেকে উঠে ওযূ করে নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান ব্যক্তি এত সকালে কাজী সাহেবকে দেখে বিস্মিত হলো; কারণ প্রতিবেশি হলেও কাজী সাহেব কখনোই খ্রিস্টান ব্যক্তির বাসায় আসা তো দূরের কথা কখনো খোঁজও নেয়নি। সে বললো, ‘আপনি এত সকালে আমার বাসায় কি জন্য এলেন?’ কাজী সাহেব খ্রিস্টান ব্যক্তিকে বললো, ‘তুমি গত রাতে যে নেক কাজ করেছো তা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। আমি তোমাকে এক লক্ষ দিরহাম দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, ‘আমার খেয়ালে আসেনা যে, আমি কোনো উল্লেখযোগ্য নেক কাজ করেছি। তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন। আর কি এমন নেককাজ যা আপনি এত মূল্য দিয়ে কিনতে চাচ্ছেন!’ তখন কাজী সাহেব বললো, ‘তুমি গত রাতে আশুরা শরীফ উপলক্ষে এক গরীব আলিম ব্যক্তিকে সাহায্য করেছিলে?’ খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করে বললো, ‘হ্যাঁ, আমি সেই আলিম ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী আশুরা শরীফ উপলক্ষে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম হাদিয়া দিয়েছি। সাথে আমার তরফ থেকে আরো বিশ দিরহাম হাদিয়া করে প্রতি মাসে তাঁকে এ পরিমাণ হাদিয়া দেয়ার ওয়াদা করেছি।’ কাজী সাহেব বললো, ‘তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি তাঁর সাথে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছো আমি তাঁকে তা দিয়ে দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, ‘হে কাজী সাহেব! আপনি কি জন্য এই সামান্য হাদিয়া করার বিনিময়ে আমাকে এক
লক্ষ দিরহাম দিবেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন? এই সামান্য হাদিয়ার কি এত গুরুত্ব?’ তখন কাজী সাহেব তার স্বপ্নের কথা খুলে বললো; তারপর বললো, ‘তুমি তো খ্রিস্টান। তুমি তো এই বালাখানা পাবে না। কারণ, পবিত্র দ্বীন ইসলাম আসার পরে পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম বাতিল হয়ে গিয়েছে। কাজেই সেই ধর্মের উপর যারা থাকবে তারা জান্নাত লাভ করতে পারবে না।’ তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, ‘আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে কি এই বালাখানার মালিক হতে পারবো?’ তখন কাজী সাহেব বললো, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ
করো তাহলে বালাখানা লাভ করতে পারবে।’ তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, ‘হে কাজী সাহেব! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি এক্ষুনি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।’ সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা মুহররম মাসকে এবং এর মধ্যস্থিত আশুরার দিনকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি মুহররম মাস ও আশুরার দিনকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! পবিত্র মুহররম মাস এবং পবিত্র আশুরা শরীফ উনাকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন, এমনকি জান্নাত নছীব করলেন। সুবহানাল্লাহ!
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
‘বিনয়’ প্রকাশ করা ঈমানদার মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত উত্তম এক আমল
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বিনয়’ প্রকাশ করা ঈমানদার মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত উত্তম এক আমল
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বিনয়’ প্রকাশ করা ঈমানদার মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত উত্তম এক আমল
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘বিনয়’ প্রকাশ করা ঈমানদার মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত উত্তম এক আমল
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলাদের ইমামতি জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলাদের ইমামতি জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলাদের ইমামতি জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলাদের ইমামতি জায়িয নেই
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (১৫)
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ আহলিয়ার কাজে আহালের সহযোগিতা
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৭)
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের ইজ্জত-সম্মান, পর্দা রক্ষা করার বিষয়ে সুখবর! সুখবর! সুখবর!
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)