এ সম্পর্কে বাস্তবে অসংখ্য ঘটনা মুবারক বর্ণিত রয়েছেন। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন- হযরত ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ যিয়ারতের সময় আমি একবার এক যুবকের সাক্ষাৎ পাই। সে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিল। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রে সে নির্ধারিত দোয়া না পড়ে সবস্থানেই শুধু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করছিল। হযরত ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে বললেন- ‘হে যুবক! তোমার কি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ ছাড়া অন্য কোনো দোয়া জানা নেই? তুমি সবস্থানেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ পাঠ করছো, তার কারণ কী?’ যুবক ছেলেটি বললো- ‘আমার সব দোয়াই জানা রয়েছে। কিন্তু অন্য কোনো দোয়া পাঠ না করে সবস্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করার পিছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। সম্মানিত হজ্জ উনার কাজ শেষ করে আপনাকে আমি তা বলবো।’ অতঃপর সম্মানিত হজ্জ উনার কাজ শেষ করে যুবক ছেলেটি হযরত ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো- ‘বেশ কিছু বছর আগের কথা। আমি আমার পিতার সাথে সম্মানিত হজ্জ আদায় করতে আসছিলাম। পথ চলতে চলতে একপর্যায়ে আমাদের পথে একটি মরুভূমি পড়লো। আমরা মরুভূমি পার হচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার পিতা কঠিন অসুস্থ হয়ে সেখানেই মারা গেলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর আমার পিতার চেহারা বিকৃত হয়ে হুবহু শূকরের মত হয়ে গেল। না‘ঊযুবিল্লাহ! আমি অনেক কান্নাকাটি করতে থাকলাম এবং একটি কাপড় দ্বারা আমার পিতার চেহারা ঢেকে দিলাম। আর চিন্তা করতে থাকলাম যে, আমি এখন কী করবো? মরুভূমি পার হয়ে তারপর গ্রাম রয়েছে, বাড়ি-ঘর রয়েছে; আমার পিতার চেহারা ব্যতিক্রম না হলে হয়তো গ্রামে গিয়ে মানুষদেরকে ডেকে এনে গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু এই অবস্থায় গ্রামের মানুষদেরকেও ডাকতে যেতে পারছি না। কারণ তারা এসে যদি দেখে আমার পিতার চেহারা এরকম হয়েছে, তাহলে তারা গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা তো করবেই না; বরং তারা ঘৃণা প্রকাশ করবে এবং আমার পিতাকে খারাপ বলবে। সে জন্য আমি গ্রামবাসীদের নিকট গিয়ে বিষয়টি বলতেও পারছিলাম না; আবার একা একা গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থাও করতে পারছিলাম না। একদিকে আমার পিতা মারা যাওয়ার শোক এবং কষ্ট; আর অন্যদিকে কঠিন চিন্তা। তখন আমি আমার উভয় হাটুর মধ্যে মাথা রেখে উপুড় হয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এমন সময় নিজের অজান্তেই আমার তন্দ্রা আসলো। আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেও পারব না। আমি ঘুমের মধ্যে দেখি- ‘অত্যন্ত সুন্দর, নূরানী একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়ে আমার পিতার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে আমার পিতার মুখে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) বুলিয়ে দিলেন। সাথে সাথেই আমার পিতার চেহারা অত্যন্ত সুন্দর হয়ে গেলো এবং চাঁদের মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠল।’ সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি যখন চলে যাওয়ার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন উনাকে আমি জড়িয়ে ধরে বললাম- ‘দয়া করে আমাকে বলুন- আপনি কে? আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পরিচয় মুবারক কী? এই কঠিন বিপদের সময় আপনি দয়া করে আমার পিতার চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন এবং আমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়া-ইহসান মুবারক করেছেন। তখন তিনি দয়া করে ইরশাদ মুবারক করলেন যে, ‘আমি হচ্ছি তোমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক শোনামাত্রই আমি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ) লুটিয়ে পড়ে বূছা দিলাম। তারপর আরজী পেশ করলাম- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতার মৃত্যুর সংবাদ আপনার নিকট কে পেশ করলো? আমি তো এই সংবাদ এখনো কাউকে দেইনি! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- ‘তোমার পিতা প্রতিদিন আমার প্রতি ৩শ বার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করতো। আজকে তোমার পিতার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ আমার কাছে পৌঁছেনি। তাই আমি তোমার পিতাকে এই কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য এবং নাজাত দেয়ার জন্য এখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়েছি। তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার পিতার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুপারিশ মুবারক করে গেলাম। তোমার পিতার গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের কুদরতী ফায়ছালা হবে।’ সুবহানাল্লাহ!

তারপর আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি আমার পিতার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দেখলাম যে, সত্যিই আমার পিতার চেহারা অত্যন্ত সুন্দর হয়ে গেছে এবং চাঁদের মত জ্বলজ্বল করছে। তখন আমি ইতমিনান হলাম এবং চিন্তা করলাম যে, তাহলে এখন মরুভূমি পার হয়ে গ্রামের মানুষদেরকে আমার পিতার ইন্তিকালের বিষয় বলে গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য বলতে পারবো। এই চিন্তা করে আমি গ্রামের দিকে রওয়ানা হলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম- অনেক লোক দলে দলে এদিকে আসছে। যেন গ্রামের সব মানুষ আমাদের দিকে ছুটে আসছে। কারো হাতে কোদাল, কারো হাতে কাপড়, কারো হাতে বাঁশ, কারো হাতে পানি ইত্যাদি গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সমস্ত কিছু নিয়ে গ্রামবাসীরা এদিকে আসছে। আমি গ্রামবাসীদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?’ গ্রামবাসীরা জবাব দিলো- ‘এই মরুভূমিতে একজন লোক ইন্তিকাল করেছেন। উনার গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের জন্য আমরা যাচ্ছি।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ‘আপনারা কিভাবে জানলেন যে, মরুভূমিতে একজন লোক ইন্তিকাল করেছেন? কে আপনাদেরকে সংবাদ দিল?’ উনারা বললেন- ‘আমাদের পুরো গ্রামের মধ্যে একটি গায়েবী নেদা হয়েছে যে, ‘এই মরুভূমিতে একজন লোক ইন্তিকাল করেছেন। যারা ঐ ব্যক্তি উনার গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনে শরীক হবে, তাদের সকলের জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহ্-খতাসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ সুবহানাল্লাহ! তখন আমি বললাম- ‘তিনি আমার পিতা। অমুক স্থানে তিনি রয়েছেন। আমার পিতার গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আপনাদেরকে বলার জন্যই আমি গ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম।’ তারপর গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে আমি আমার পিতার গোসল, জানাযা এবং কাফন-দাফনের কাজ সম্পন্ন করেছি। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর ঐ যুবক ছেলেটি হযরত ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলল- ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ উনার বেমেছাল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফযীলত মুবারক আমি নিজের চোখে দেখেছি। এ কারণেই তখন থেকে আমি অন্য কোনো দোয়া পাঠ না করে সব সময়, সব স্থানেই শুধুমাত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফই পাঠ করি।’ সুবহানাল্লাহ!

-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।