আইনি দুর্বলতায় হাতছাড়া হচ্ছে দেশের পণ্যস্বত্ব। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ৬০টি পণ্যের ‘দখল’ নিয়েছে ভারত।
সরকারের উচিত দেশের সম্পদের স্বত্ব পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
, ১৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৬ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সম্পাদকীয়
সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
গত পরশু থেকে রাজশাহী জেলায় গাছ থেকে পাকা আম আহরণ শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাকা আম পাড়া শুরু হয়ে যাবে।
দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম উৎপাদনকারী এলাকাগুলোকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাকে জোন-১ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জোন-২ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলাকে। নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে জোন-৩ এবং নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলাকে জোন-৪ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে, জোন-১-এর জেলাগুলোয় আম সবার আগে পাকে। আর সবচেয়ে পরে পাকে জোন-৪-এর জেলাগুলোয়।
সরকারী হিসেবে এ বছর আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে প্রকৃত হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি।
বাংলাদেশে ১৫২টি বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে প্রধানত ৩১টি জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্য মতে, প্রায় ৮টি বহুল সমাদৃত ভৌগোলিক নির্দেশক আমের জাত রয়েছে। এসব জাতে বিভিন্ন জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ্য হতে স্বাদ, গন্ধ ও অন্যান্য মানগত বৈশিষ্ট্য ওই নির্দিষ্ট এলাকার আবহাওয়া ও পানিবায়ুর ওপর নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল এবং এই জাতগুলোর ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে এদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোও পরবর্তিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের এসব ভৌগোলিক নির্দেশক ফসলের অবস্থান, চাষাবাদের ইতিহাস, ফসলগুলোর বিস্তারিত জিনগত বৈশিষ্ট্যায়নের (অঙ্গসংস্থানগত ও মলিকুলার) তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে বায়োপাইরেসির মাধ্যমে এসব ফসলের স্বত্বাধিকার বা প্যাটেন্ট অন্য দেশের হাতে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিজস্ব আমের জাতগুলোর ওপর স্বত্বাধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে অন্যদেশ যদি বাংলাদেশের আমের জাতের উপর স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করে তাহলে সেই দেশকে আমের বাণিজ্যিক অংশীদার করতে হবে। এতে দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হবে।
ইতোমধ্যে ভারত বেশ কয়েকবার এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সম্পদ, প্রাণবৈচিত্র্য এবং কৃষিজ পণ্যের উপর একের পর এক মেধাস্বত্ব অধিকার তথা মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে ভারত। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের ফজলি আম, জামদানি, নকশিকাঁথার পেটেন্ট করে নিয়েছিলো ভারত। যদিও পরবর্তীতে তথ্যাদি-প্রমান পেশ করে বাংলাদেশ এগুলোর স্বত্ব ফিরে পেয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ফজলি আমের স্বত্বও ফিরে পেয়েছে। কিন্তু এরপরও নিম, হলুদ, বাসমতি চালসহ ৬০ টি বাংলাদেশী পণ্যের স্বত্ব এখনো নিজেদের করায়ত্ত্বে রেখেছে ভারত।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ২৩টি চুক্তির একটি হচ্ছে ‘বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার চুক্তি বা ট্রিপস (ট্রেড রিলেটেড আসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস)। এই চুক্তির ২৭.৩(খ) ধারায় পৃথিবীর সব প্রাণ-প্রকৃতি-প্রক্রিয়ার উপর প্যাটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে। এই চুক্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রাকৃতিক, মানুষের তৈরি এবং কৃষিজাত পণ্য দীর্ঘকাল ধরে উৎপাদিত হয়ে আসছে, তার উপর সংশ্লিষ্ট দেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) আইন করে নিবন্ধন করে রাখার বিধান রয়েছে।
পাশাপাশি, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ভৌগোলিক নির্দেশক আইন (জি আই এ) ১৯৯৯-এর ২২,২৩ ও ২৪ ধারা অনুযায়ী বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজেদের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে। এজন্য নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত পণ্যকে নিজস্ব জি,আই,এ আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। ফলে ভারত ১৯৯৯ সালে এবড়মৎধঢ়যরপধষ ওহফরপধঃরড়হং ড়ভ এড়ড়ফ (জবমরংঃৎধঃরড়হ ্ চৎড়ঃবপঃরড়হ) অপঃ করে ফেলে এবং এর অধীনে পণ্য প্যাটেন্ট করা শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এই আইনটি করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি তখন। এটিকে ফেলে রাখা হয় হিমাগারে। যার ফল ভোগ করছে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি পণ্যের প্যাটেন্ট যদি নিশ্চিত করা না হয়, শক্তিশালী আইন না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এ সকল সম্পদের বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব নিয়ে যাবে বিদেশিরা। মেধাস্বত্ব মালিকানা হারানোর ফলে ভবিষ্যতে ট্রিপস চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। এছাড়াও বাধাগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা। হাতছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের লোকায়ত জ্ঞান।
সরকারের উচিত হবে, যতগুলো বাংলাদেশি পণ্যের প্যাটেন্ট ভারত নিয়ে গেছে সেগুলোর স্বত্ব ফেরত পেতে অতিশীঘ্রই শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাংলাদেশ যদি জিআই আইন বাস্তবায়ন করে এসব পণ্যের নিবন্ধনের জন্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে আবেদন করে এবং উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিতে পারে- তবে এসব পণ্যের প্যাটেন্ট ফিরে পাবে বাংলাদেশ। এজন্য ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করে এদেশেরই ঐতিহ্যবাহী ভৌগোলিক পণ্য আম, নিম, বাসমতি, হলুদসহ ৬৬টি ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ভারতের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাশাপাশি বাংলাদেশের বাকী যে সকল বিষয়গুলোর স্বত্ব হুমকির মুখে রয়েছে যেমন; ধান, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, রয়েলবেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, পদ্মার ইলিশ, নকশি কাঁথা, কুমিল্লার খদ্দর, রাজশাহীর সিল্ক, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, বগুড়ার দই, বাঁশ বেতের শিল্প, মাটি ও কাঁসার পাত্রসহ শত শত পণ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি রয়েছে যা’ অনায়াসে জিআই পেটেন্ট পাওয়ার হকদার।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দেশে সাড়ে ৩ কোটি শুধু শিশুই সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং সব প্রাপ্ত বয়স্করাও ক্ষতিগ্রস্থ সিসার ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুন্নতী তৈজসপত্র ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্রের জিনিস ক্রয়ে নিবেদিত হতে হবে ইনশাআল্লাহ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাব্যার্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আরো ক্ষমতা দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জ্বালানী তেলের দাম এক্ষুনি কমাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অনেক কিছু করার প্রচারনা চালালেও জিডিপি এবং দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি অর্থনীতির লাইফ লাইন এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করছে না
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, মুসলমানের দ্বীনি অধিকার, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনের আবহ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়।
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সিঙ্গাপুর, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ বাংলাদেশেও বিভিন্ন মহলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবী জোরদার হচ্ছে, সংস্কারের দাবীদার সরকার কী করে নির্বিকার থাকতে পারে?
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্যাপকভাবে বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ও হয়রানী জান-মাল এবং সম্মান হিফাজতে সরকারকে এক্ষুনি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পাচারকৃত ১৭ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে শামুকের মত ধীর গতি বরদাশতের বাইরে
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সোনার বাংলার আরেক সোনালী অর্থনীতি- মৎস্য সম্পদ এর সমৃদ্ধির সুফল জনগণের হাতে যথাযথভাবে তুলে দিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস এখন জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ নারিকেল দ্বীপ বাঁচানোর মিথ্যা প্রচারণার আগে সত্যিকার অর্থে ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। ইনশাআল্লাহ!
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সরকারের নির্দেশ আর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কমানো হচ্ছে না শিশুর কাধে ১২ কেজির বইয়ের বোঝা সংস্কারের দাবীদার- নতুন সরকার কী নতুন বছরে শিশুর কাধে বইয়ের বোঝা কমাবে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বীজ আইন সংস্কার করে শস্যের বীজে কৃষকের আসার নিশ্চিত করতে হবে।
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)