সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিমুখতার কুফল!
অবৈধ সম্পর্কে বিশ্বে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশই পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশ!
, ০৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশগুলো প্রায়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আযীমী শান মুবারক উনার উপর আঘাত করে থাকে। কখনো বোরকা নিষিদ্ধ করে, কখনো মসজিদের মিনার নিষিদ্ধ করে, আবার কখনো বাক স্বাধীনতার নামে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এক্ষেত্রে ফ্রান্স, জার্মানী, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধিবিধানেও তারা হস্তক্ষেপ করে। মুসলমানদের দ্বীনি স্বাধীনতা দিতে তারা নারাজ। অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যেই রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ফায়সালা। যাতে মুসলিম, অমুসলিম সবার জন্যই রয়েছে বিরাট কল্যাণ। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা না করে যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধানগুলো তারা অনুসরণ করতো তাহলে তারাও এই বিরাট কল্যাণ লাভ করতো।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিমুখতার কারণে পশ্চিমা সমাজব্যবস্থা আজ অধঃপতনের দ্বারপ্রান্তে। বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক, পরকিয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, গর্ভপাত, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌন হয়রানী ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাজ্যের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনেও সেটা এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বিশ্বের অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশই পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশ।
উল্লেখ্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনি বলে দিন, আমার মহান রব তা’য়ালা অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ...।” (পবিত্র সূরা আ‘রাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “আর মু’মিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল। যদি তোমরা তাদের মোহরানা প্রদান কর বিবাহের জন্য। প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমাদের কেউ যেন (বেগানা) নারীর সাথে একান্তে মিলিত না হয়। কেননা তখন শয়তান তাদের তৃতীয়জন হিসেবে উপস্থিত হয়।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১১৪)
এই দেশগুলো যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপরোক্ত বিধান অনুসরণ করতঃ তাহলে তাদের দেশে এরকম নৈতিক অধঃপতন হতো না।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট এক সমীক্ষায় দেশগুলোর অধঃপতনের খবর দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার শীর্ষ দেশ থাইল্যান্ড হলেও অপর নয়টি দেশ ইউরোপের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে সমীক্ষাটি চালায় দ্য রিচেস্ট ও ম্যাচ ডটকম।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অবৈধ সম্পর্কের তালিকা নিম্নক্রম অনুসারে শীর্ষ দশটি দেশের তালিকা ও তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো।
১. ফিনল্যান্ড: ৩৬ শতাংশ। ২০১০ সালের পর থেকে ফিনল্যান্ডে বিবাহিতদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের হার দ্রুত বাড়ছে। অনেকের মতে, ফিনল্যান্ডে অনেক সময় অবৈধ সম্পর্ককে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা হয়। অনেক সময় সামাজিকভাবেও স্বীকৃতি দেয়া হয়। ম্যাচ ডটকমের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজন পুরুষের অন্তত একজনের সঙ্গে ১০ নারীর সম্পর্ক দেখা যায়। নারীদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের হার এর চেয়েও বেশি।
২. যুক্তরাজ্য: ৩৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে অবৈধ সম্পর্কের হার ফিনল্যান্ডের সমান।
৩. স্পেন: ৩৯ শতাংশ। ঐতিহ্যগতভাবেই স্পেনে ক্যাথলিক প্রভাব বেশি। তাই সামাজিকভাবে অবৈধ সম্পর্ককে খারাপ দৃষ্টিতেই দেখা হয়। তবে বিবাহবিচ্ছেদের হার এখানে ৬০ শতাংশ। বিচ্ছেদের আগেই অন্য সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার কারণেই অবৈধ সম্পর্কের হার বেশি হতে পারে।
৪. বেলজিয়াম: ৪০ শতাংশ। বেলজিয়ামের সঙ্গে ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মানুষের চিন্তাধারায়ও মিল রয়েছে। দেশটিতে বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে অনলাইট ডেটিং সাইটের বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যায়। দেশটির একটি শীর্ষ ডেটিং সাইটে এই সংখ্যা ১০ লাখ। অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই অবৈধ সম্পর্কে যুক্ত।
৫. নরওয়ে: ৪১ শতাংশ। নরওয়ের আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের হার পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে অনলাইনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাহকের সংখ্যা ৭৮ শতাংশ বেড়ে যায়।
৬. ফ্রান্স: ৪৩ শতাংশ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক তরুণীর সম্পর্ক প্রকাশ পেলে বিশ্বজুড়েই তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। তবে ফ্রান্সে বিষয়টি ততটা আলোচিত হয়নি। তবে ফ্রান্সে ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’র মতো অতিমাত্রায় রগরগে চলচ্চিত্রকেও ১২ বছর বা তদূর্ধ্বদের জন্য উপযুক্ত ঘোষণা করেছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফরাসিদের প্রথম না হওয়াকে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে। অধিকাংশ ফরাসি মনে করে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকা খারাপ কিছু নয়। ৬৩ শতাংশ ফরাসি মনে করে, সম্পর্কের বিষয়ে সৎ না থেকেও একজনকে ভালোবাসা সম্ভব।
৭. জার্মানি: ৪৫ শতাংশ। বিবাহিত সম্পর্ককে ফরাসিদের চেয়ে গুরুত্ব দেয় জার্মানরা। তবে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের হারও বেশি। অবৈধ সম্পর্কের কথা স্বীকার করা ৪০ শতাংশ পুরুষ এ জন্য অনুশোচনা করে। জার্মান নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪৩ শতাংশ।
৮. ইতালি: ৪৫ শতাংশ। ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রীই অবৈধ সম্পর্কের জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে অবৈধ সম্পর্কের জন্য আলোচিত ক্যাসানোভা কাহিনীয় ইতালিরই। সেই দেশের মানুষ বিশ্বতালিকায় অবৈধ সম্পর্কে তৃতীয় হওয়া অতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ইতালিতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেশ কম। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ সম্পর্ককে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়া হয়।
৯. ডেনমার্ক: ৪৬ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপের বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। তবে ডেনমার্কের অনলাইন ডেটিংয়ে বিবাহিত নারীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
১০. থাইল্যান্ড: ৫৬ শতাংশ। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের (যৌনপল্লী) সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির অর্থনীতির একটি বড় আয় আসে এই খাত থেকে। থাই বিবাহিত নারীপুরুষের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার হার বিশ্বের সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ। থাইল্যান্ডের অনেক সমাজে পুরুষের সঙ্গে স্ত্রী ব্যতীত সম্পর্ককে খারাপ চোখে দেখা হয় না। এ ছাড়া ধনীদের মধ্যে মিয়া নোয়িস নামক একটি প্রথার মাধ্যমে স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ককে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদেশ মুবারক অনুসরণ না করা, পর্দা ও বোরকা না মানায় উপরোক্ত দেশগুলো বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ১০ এর মধ্যে অবস্থান করছে। তাই এসব দেশসহ অন্যান্য দেশের উচিত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধীতা নয় বরং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধান অনুসরণ করা। তাহলেই এই ভয়াবহ নৈতিক অধঃপতন থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
-আহমদ মুবাশশ্বিরা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্তানদের ও পরিবারের সকলকে সালাম দেয়া শিক্ষা দান করুন
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৪)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফের বিশ্বে নারীরা শুধু কি এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে?
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন দ্বীনদার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী মহিলা উনার পর্দা পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মহিলা জামাত নাজায়িজ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শৈশবকাল থেকেই সন্তানকে দ্বীনদার হওয়ার শিক্ষা দান করতে হবে
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিতা মহিলা আউলিয়া-ই কিরাম উনাদের পরিচিতি
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বচক্ষে দেখা কিছু কথা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের গুরুত্ব ও তারতীব
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ : মেথি
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাবার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)